সীমানা নির্ধারণের কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র।
বেশ কিছু দিন দৃশ্যত থমকে থাকার পরে শ্রীরামপুরের মাহেশে প্রস্তাবিত সিল্ক হাবের কাজ নিয়ে ফের নড়াচড়া শুরু হল। প্রস্তাবিত প্রকল্পের জমির সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু হল মঙ্গলবার। প্রশাসন সূত্রের দাবি, এই কাজ হলেই পাঁচিল দিয়ে প্রকল্প এলাকা ঘিরে ফেলা হবে। তার পরেই মূল কাজ শুরু হয়ে যাবে।
এ দিন মহকুমাশাসক (শ্রীরামপুর) সম্রাট চক্রবর্তী, চাঁপদানির বিধায়ক অরিন্দম গুঁইন, শ্রীরামপুরের পুরপ্রধান গিরিধারী সাহা, পুর-পারিষদ পিন্টু নাগ, সন্তোষ সিংহ-সহ অন্য কাউন্সিলররা ওই এলাকায় যান। ভূমি দফতরের আধিকারিকরাও ছিলেন। নথি দেখে, ফিতে ফেলে মাপজোক করা হয়। গিরিধারীবাবু বলেন, ‘‘এই কাজের পরেই সীমানা পাঁচিল দেওয়া হবে। তার পরে মূল কাজ হবে। হাব হলে সিল্ক প্রিন্টিং শিল্পের ব্যবসা এক ছাতার তলায় চলে আসবে। তাতে কাজে এবং বিপণনে ব্যবসায়ীদের অনেক সুবিধা হবে। অনেক লোকের কর্মসংস্থানও হবে।’’ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতর ওই প্রকল্প গড়বে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বার রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পরেই শ্রীরামপুরের মাহেশ মৌজায় এই প্রকল্প ঘোষণা করেন। ২০১৪ সালের জুন মাসে প্রকল্পের শিলান্যাস হয়। ২০১৫ সালের মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে সেই সময় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু তার পর থেকে সাত বছর পেরিয়ে গিয়েছে। মাঝে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে প্রকল্পের কথা উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী কাজ শুরুর নির্দেশ দেন। কিন্তু, প্রকল্পের কাজ কাঙ্ক্ষিত গতি পায়নি।
পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, নানা কারণে কাজে দেরি হলেও এ বার জোরকদমে কাজ এগোবে। পুর-পারিষদ পিন্টু বলেন, ‘‘অনেক কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। সে জন্য আমরা এই কাজে ঝাঁপাব। সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কাজ হবে।’’
শ্রীরামপুরের তারাপুকুর, রাজ্যধরপুর, পিয়ারাপুর, নওগাঁ, মরাদান, বৌবাজার-সহ আশপাশে সিল্ক প্রিন্টিংয়ের ছোটবড় বহু কারখানা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। অনেকেরই কারখানা বাড়িতে। বেশ কয়েক হাজার শ্রমিক এই কাজে যুক্ত। তবে, গত কয়েক বছর ধরে কারবারে মন্দা চলছে বলে ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি। এই পরিস্থিতিতে কেউ ব্যবসা ছোট করে দিয়েছেন। কেউ গুটিয়ে ফেলেছেন। শ্রমিকদের কেউ অন্য কাজে যোগ দিয়েছেন। সিল্ক হাব তৈরি হলে কারবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে ব্যবসায়ীদের একাংশ মনে করছেন। তাঁরা চাইছেন, আর না থমকে কাজ যেন জোরকদমে হয়।
ওই জমিতে তাঁরা চাষ করেন বলে বছর তিনের আগে প্রস্তাবিত প্রকল্প নিয়ে কিছু লোক বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। তার জেরে জমি মাপজোকের কাজে ব্যাঘাত ঘটেছিল। এ দিনও কয়েক জন একই দাবি করেন। মহকুমা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের বলেছি, জমির বৈধ কাগজ থাকলে তা নিয়ে দেখা করতে। ভূমি দফতরের আধিকারিকরা নিশ্চিত করেছেন, প্রকল্প এলাকায় ব্যক্তিগত জমি নেই। খাস জমিতেই প্রকল্প হচ্ছে। ফলে, প্রকল্প রূপায়ণে কোনও সমস্যা হবে না।’’ পুরপ্রধানও বলেন, ‘‘মুখে বললেই তো হবে না, কাগজ দেখাতে হবে। বৈধ কাগজ কারও নেই। বৈধ নথি থাকলে জোর করে জমি নেওয়ার প্রশ্নই নেই। বৃহত্তর স্বার্থে এই প্রকল্প হচ্ছে। খাসজমিতেই তা হচ্ছে।’’