রিয়া কুমারী খুনে নিজেকে নির্দোষ দাবি বলে করলেন তাঁর স্বামী প্রকাশ কুমার। নিজস্ব চিত্র।
স্ত্রীকে তিনি খুন করেননি। তাঁদের উপর হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এমনটাই জানালেন হাওড়ায় ঝাড়খণ্ডের অভিনেত্রী রিয়া কুমারী হত্যায় ধৃত তাঁর স্বামী প্রকাশ কুমার। বৃহস্পতিবার প্রকাশকে হাজির করানো হয়েছিল উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে। বিচারক তাঁকে ১২ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগনান থানা থেকে উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় প্রকাশকে। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের সামনে তাঁর দাবি যে, তিনি নির্দোষ। তাঁর কথায় ‘‘আমি ৫০০ কিলোমিটার দূর থেকে আসছি। স্ত্রীকে কেন মারব? তা হলে তো অন্য কোথাও মারতে পারতাম।’’ প্রকাশ, তাঁর দুই ভাই এবং তাঁর প্রথমপক্ষের স্ত্রীর বিরুদ্ধে বাগনান থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন রিয়ার ভাই। এর পরই গ্রেফতার করা হয়েছে প্রকাশকে। রিয়ার ভাইয়ের অভিযোগ নিয়ে প্রকাশের মন্তব্য, ‘‘আমি কাউকে দোষ দিতে চাই না। ওঁর জায়গায় আমি থাকলে একই কথা বলতাম।’’ তাঁর দাবি, ‘‘যে ঘটনা ঘটেছে তা পুলিশ ভ্যানের সামনে হয়েছিল। হামলাকারীরা এসেছিল সাদা গাড়ি চড়ে। পুলিশ ভ্যান দাঁড়িয়েছিল ১০০ মিটার দূরে। আমি তখন পুলিশের পায়ে পড়েছি। স্ত্রীকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে ওঁদের সাহায্য চেয়েছি।’’
রিয়া প্রকাশের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রীর নাম শ্রদ্ধা। তাঁর নামেও অভিযোগ করেছেন রিয়ার ভাই। এ নিয়ে প্রকাশ বলেন, ‘‘প্রথম পক্ষের স্ত্রী শ্রদ্ধার সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই। তবে মাঝেমাঝে ওঁকে টাকাপয়সা দিই। কারণ আমাদের দুই সন্তান আছে।’’ প্রকাশ জানিয়েছেন, ২-৬ মাস অন্তর ৫০০-২,০০০ টাকা তিনি দিয়ে থাকেন শ্রদ্ধাকে। তাঁর দাবি, ‘‘শ্রদ্ধা আমাদের বাড়ি আসেন না।’’ শ্রদ্ধার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে কি না সেই প্রশ্নের উত্তরে প্রকাশের দাবি, তাঁদের আইনমাফিক বিচ্ছেদ হয়নি। তবে পঞ্চায়েত এবং পুলিশের মাধ্যমে দু’জনের সম্পর্কে ছেদ টানা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। শ্রদ্ধার এমন রিয়ার সম্পর্ক কেমন ছিল, এই প্রশ্নের উত্তরে প্রকাশ বলেন, ‘‘দুই সতীনের মধ্যে কখনও কখনও অশান্তি লেগে থাকত।’’
তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকাশের গাড়ি থেকে বালিশ, তোশক এবং চাদর উদ্ধার হয়েছে। বুধবার সকালে রিয়াকে যখন রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তখন তাঁর দেহে একটি তোশক চাপা দেওয়া ছিল বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার রিয়ার দেহের ময়নাতদন্ত হয় উলুবেড়িয়া মর্গে। পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে ভিসেরা। তাঁকে গাড়িতে শোওয়া অবস্থায় গুলি করা হয়েছিল কি না তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি, রিয়ার নামে মোটা টাকার বিমা ছিল কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবারও ফরেন্সিক দল যায় হাওড়ার বাগনানের রাজাপুর এলাকায় জাতীয় সড়কের উপর মহিষরেখা সেতুর কাছে, যেখানে গুলি করে খুন করা হয়েছিল রিয়াকে।