পাঁচলা এলাকার বাসিন্দাদের মূল পেশা জরির কাজ। — ফাইল চিত্র।
হাওড়া জেলার অন্যতম অনুন্নত ব্লক হল পাঁচলা। ১১ গ্রাম পঞ্চায়েতের এই পাঁচলা মূলত সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। এলাকার বাসিন্দাদের মূল পেশা জরির কাজ। তার সঙ্গে চাষবাস। এই ব্লকটির অবস্থান কলকাতার কাছে। ব্লকের বুক চিরে চলে গিয়েছে মুম্বই রোড এবং রানিহাটি-আমতা রাজ্য সড়ক। দুটি রাস্তাই ঝাঁ চকচকে। কলকাতার খুব কাছের ব্লক হওয়ায় এই দুই সড়কের দু’ধারে গড়ে উঠেছে বহু কারখানা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেই সব কারখানার জন্য জমি সংগ্রহ করতে গড়ে উঠেছে ‘দালালচক্র’। ফলে চাষ এবং জরির কাজের পাশাপাশি জমির দালালিও এখানে একটা নতুন পেশাও।
এই দালালদের সিংহভাগই শাসক দলের ছোট ও মাঝারি মাপের নেতা। এলাকাবাসীর ক্ষোভ, কারখানা গড়ে উঠলেও সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা কাজ পাননি। এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন খোদ পাঁচলার তৃণমূল বিধায়ক গুলশন মল্লিক। যে মুষ্টিমেয় এলাকাবাসী এই সব কারখানায় কাজ পেয়েছেন তাঁদের আবার অভিযোগ, মজুরি কম।
পাঁচলায় লক্ষাধিক মহিলা ও পুরুষ জরির কাজের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির পর থেকেই এই ব্যবসাতেও মন্দ চলছে। অনেকেই বাধ্য হয়ে জরির কাজ ছেড়ে কারখানায় কাজে লেগেছেন। তাঁদের ক্ষোভ, একশো দিনের কাজ বন্ধ থাকায় সমস্যা বেড়েছে। সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন বিধায়কও। তিনি বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া এলাকার অর্থনীতিতে বড় আঘাত।’’
এলাকার বাসিন্দা তথা সারা ভারত জরিশিল্পী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মুজিবর রহমান মল্লিকের অভিযোগ অবশ্য ভিন্ন। তাঁর ক্ষোভ, জরিশিল্পীদের উন্নতির জন্য সরকার কোনও প্রকল্প হাতে নেয়নি। সাঁকরাইলে জরি হাব করা হলেও তা ধুঁকছে। মুজিবরের অভিযোগ, ‘‘সরকার জরিশিল্পীদের পাশে দাঁড়ায়নি বলেই হাজার হাজার শিল্পী ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন। তাঁরা পরিযায়ী শ্রমিকে পরিণত হয়েছেন।’’ গুলশন অবশ্যঅভিযোগ মানেননি।
শুধু তাই নয়, যে চাষ একটা সময়ে পাঁচলার জিয়নকাঠি ছিল, কলকারখানার জন্য সেটাও সঙ্কটে পড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। এক দিকে যেমন চাষের জমি কমে গিয়েছে তেমনই মাটি মাফিয়াদের উপদ্রব বেড়েছে। কারখানার জমি ভরাট করার জন্য বেআইনি ভাবে চাষের জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘‘মাটি মাফিয়ারা চাষের জমির সর্বনাশ করে দিচ্ছে। প্রশাসন সব দেখেও চুপ করে আছে।’’
ব্লক প্রশাসনের বক্তব্য, মাটি কাটার অভিযোগ পেলেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিধায়ক ও সাংসদ তহবিলের টাকায় এলাকায় প্রচুর পিচ ঢালা ও ঢালাই রাস্তা হয়েছে। হাই মাস্ট বাতি জ্বলছে। গাববেড়িয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল এবং কুলাইয়ে ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালের উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে। তৈরি হয়েছে অসংখ্য উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং সু-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। বাড়ি বাড়ি নলবাহিত পানীয় জল দেওয়ার জন্য ১১ টি ব্লক জুড়েইকাজ চলছে।
তবে অপ্রাপ্তিও আছে। এলাকায় জেলার মধ্যে একমাত্র ইংরেজি মাধ্যম হাই মাদ্রাসার নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। কোথাও চালু হয়নি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তনুশ্রী পাত্র-র অবশ্য দাবি, ‘‘পাঁচ বছরে পাঁচলার অনেক উন্নতি হয়েছে। বেলডুবিতে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র তৈরির কাজ চলছে। বাকি পঞ্চায়েতে জমি খোঁজা চলছে।’’