প্রতীকী ছবি
এত দিন ধরে অবহেলার অন্ধকারে পড়ে থাকা সংযুক্ত ওয়ার্ডগুলির উন্নয়নকে পাখির চোখ করেই আগামী অর্থবর্ষের বাজেট পেশ হল হাওড়া পুরসভায়। সোমবার ওই বাজেট পেশ হওয়ার পরে পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘হাওড়ার ৪৫ থেকে ৫০ নম্বর, অর্থাৎ সংযুক্ত ওয়ার্ডগুলিতে রাস্তাঘাট, আলো বা নিকাশির কোনও উন্নয়ন হয়নি। তাই ২০২২-’২৩ সালের বাজেটে ওই সমস্ত ওয়ার্ডের উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ৩৫৬ কোটি টাকার বাজেটে শুধুমাত্র ওই ওয়ার্ডগুলির জন্যই বরাদ্দ করা হয়েছে ৮ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা।’’
প্রায় চার বছর ধরে নির্বাচন না-হওয়ায় হাওড়ায় এ বার প্রশাসকমণ্ডলীর সভায় বাজেট পেশ হয়। ২০১৩ সালে পুর বোর্ড গঠিত হওয়ার পরে প্রতি বছর যে ভাবে ভর্তুকিশূন্য বাজেট পেশ করা হত, এ বছরেও সেই ধারা বজায় রাখা হয়েছে। প্রশাসকমণ্ডলীর সভায় সেই বাজেট সার্বিক ভাবে গৃহীতও হয়েছে। পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৩৬৫ কোটি টাকার যে ভর্তুকিহীন বাজেট পেশ করা হয়েছে, সেই টাকা আসবে সম্পত্তিকর, লাইসেন্স-ফি এবং বিল্ডিং দফতর-সহ নানা বিভাগের রাজস্ব আদায় থেকে। এর মধ্যে সরকারি অনুদান বাবদ মিলবে ২১১ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় বাবদ আসতে পারে ৬৯ কোটি টাকা। বাকি টাকা আসবে সরকারি প্রকল্প থেকে।
বাজেট পেশ করার পরে পুরসভার চেয়ারপার্সন জানান, ৪৫ থেকে ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। যেমন, ওই সমস্ত এলাকায় রাস্তার উন্নয়নের জন্য পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতিটি রাস্তায় আলো বসাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৮০ লক্ষ টাকা। ঘরে ঘরে পানীয় জলের লাইন বা নলকূপ তৈরির জন্য ধরা হয়েছে এক কোটি টাকা। পাশাপাশি, নিকাশি নালার সংস্কারের জন্য প্রাথমিক ভাবে খরচ ধরা হয়েছে দু’কোটি টাকা।
চেয়ারপার্সন বলেন, ‘‘সংযুক্ত এলাকাগুলিতে গেলে এখনও মনে হয়, যেন গ্রামে এসেছি। বহু রাস্তা এখনও মাটির। পানীয় জলের তীব্র সমস্যা। অধিকাংশ রাস্তা সন্ধ্যার পরে অন্ধকারে ডুবে থাকে। নিকাশি ব্যবস্থাও তথৈবচ। তাই আমরা এ বারের বাজেটে সংযুক্ত ওয়ার্ডগুলির উন্নয়নে আলাদা করে জোর দিচ্ছি।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সংযুক্ত এলাকার ছ’টি ওয়ার্ডে এখনও প্রচুর কাঁচা রাস্তা রয়েছে। একটি তালিকা তৈরি করে সেই রাস্তাগুলি দ্রুত পাকা করা হবে। আর কাঁচা রাস্তা রাখা হবে না। কাঁচা রাস্তাগুলির তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া, অনেক রাস্তায় এখনও আলো নেই। সেখানে এলইডি আলো বসানো হবে। বহু এলাকায় এখনও পানীয় জলের সংযোগ যায়নি। সেখানে জলের সংযোগ দেওয়া হবে। যেখানে জলের সংযোগ দেওয়া যাবে না, সেখানে নলকূপ বসিয়ে দেওয়া হবে।
পুরসভা সূত্রের খবর, ৫০টি ওয়ার্ডে রাস্তার উন্নয়নে মোট ২০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সংযুক্ত এলাকা বাদ দিয়ে ১৫ কোটি টাকা ধরা হয়েছে বাকি ৪৪টি ওয়ার্ডের জন্য। নিকাশিতে মোট ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। যার মধ্যে ৪৪টি ওয়ার্ডের জন্য মিলবে ১০ কোটি। তবে হাওড়া ময়দানে তারামণ্ডল নির্মাণ বা বেজপুকুরে নির্মীয়মাণ সুইমিং পুলের মতো প্রকল্পে আগামী আর্থিক বছরে হাত দেওয়া হবে না বলেই জানান চেয়ারপার্সন। পাশাপাশি, আর একটি বিষয়ে এ দিন জোর দেওয়া হয়। ঠিক হয়েছে, পুকুর বোজানো ও পাড়ে ময়লা ফেলা রুখতে হাওড়া শহরের সমস্ত পুকুরের একটি তালিকা তৈরি করে সেগুলির পাড় ঘিরে ফেলা হবে।