একের পর এক প্রশাসকমণ্ডলী তৈরি করে ৫০টি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি হাওড়া পুরসভার পরিচালনার ব্যবস্থা করেছে সরকার। ফাইল ছবি।
স্থবির দশা কাটিয়ে কাজে গতি আনছে অনলাইন পরিষেবা। হাওড়া পুরসভার অধিকাংশ দফতরে অনলাইন ব্যবস্থা চালু করার এক বছরের মধ্যে এমনই সুফল মিলছে বলে দাবি পুর কর্তৃপক্ষের।
দীর্ঘ চার বছর হাওড়া পুরসভায় নির্বাচিত বোর্ড নেই। একের পর এক প্রশাসকমণ্ডলী তৈরি করে ৫০টি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি হাওড়া পুরসভার পরিচালনার ব্যবস্থা করেছে সরকার। কিন্তু যে দফতরগুলি থেকে রাজস্ব আয় হতে পারত, ওই সময়কালে সেগুলির আয় তলানিতে পৌঁছেছিল। বিভাগীয় দুর্নীতি এবং কোনও কাজ নিয়ে নাগরিকেরা পুরসভায় গেলে এক শ্রেণির অসাধু কর্মীর দ্বারা হয়রানির শিকার হওয়াটা দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছিল বলে অভিযোগ।
গত বছর বর্তমান প্রশাসকমণ্ডলী ক্ষমতায় এসে কয়েকটি দফতরে অনলাইন পরিষেবা চালু করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল, দুর্নীতি এবং নাগরিক হয়রানি কমানো। তবে বর্তমান প্রশাসকমণ্ডলীর দাবি, শুধু অনলাইন ব্যবস্থাই নয়, কয়েকটি দফতরের তরফে বিশেষ অভিযান চালিয়ে অফিসার ও কর্মীরা গত কয়েক বছরের তুলনায় আয় তিন থেকে চার গুণ বা আরও বাড়াতে সাহায্য করেছেন। হাওড়া পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘লাইসেন্স পরিষেবা অনলাইন করায় আয় দ্বিগুণ বেড়েছে। সম্পত্তিকর আদায়ও আড়াই গুণ বেড়েছে। জলের গাড়ি, শববাহী গাড়ি-সহ অন্যান্য পরিষেবাও দ্রুত অনলাইন করে দেওয়া হবে।’’ ওই কর্তার দাবি, আয় বাড়ায় বকেয়া উন্নয়নমূলক একাধিক কাজও অনেকটা এগিয়েছে।
বছরখানেক আগেই তৎকালীন পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ বিভিন্ন দফতরে অনলাইন পরিষেবা চালু করতে উদ্যোগী হন। কিন্তু নানা বাধায় তা পারেননি। বর্তমান পুর কমিশনার ধবল জৈন এবং পুর চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তীর উদ্যোগে লাইসেন্স, সম্পত্তিকর, বিল্ডিং-এর নকশা অনুমোদন, স্টোর-সহ একাধিক দফতরে অনলাইন ব্যবস্থা চালু হয়। চালু হয় ই-অফিসও।
অর্থাভাবে গত কয়েক বছর ধরে হাওড়া পুর এলাকায় রাস্তার সংস্কার হয়নি। অলিগলি, বড় রাস্তা মিলিয়ে ১০৫টির বেশি ভাঙা রাস্তার তালিকা তৈরি হয় ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে। পুরসভার একটি সূত্রের দাবি, ১-৫০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ৩৯ কোটি টাকা খরচ করে ৭০ কিলোমিটারের মতো রাস্তা মেরামত হয়েছে। জলের পাইপলাইন বসানোর জন্য কয়েকটি বড় রাস্তার কাজ বাকি। সেগুলির জন্য দরপত্র ডাকা শেষ। তবে রাস্তা মেরামতির কাজে মধ্য, উত্তর, দক্ষিণ হাওড়া এবং শিবপুরের বিধায়কদের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকেও সাহায্য এসেছে।
নিকাশি ও আবর্জনার সমস্যা প্রাচীন এই জনপদের বরাবরের মাথাব্যথা। হাওড়া শহরের অর্ধেকের বেশি ওয়ার্ডেই সামান্য বৃষ্টিতে জল জমে। গত এক বছরে ১৫ কোটি টাকা এই খাতে খরচ করা হয়েছে বলে দাবি পুরসভার। চলতি বছরেও বর্ষার আগেই নিকাশি নালা থেকে পাঁক তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। রাস্তা ও পার্কে আলো লাগাতে পাঁচ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। এ বার খোলা ভ্যাট তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে বাড়ি থেকেই বর্জ্য পৃথকীকরণ করা হচ্ছে।
পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘পুরসভার সার্বিক আয় বেড়েছে। বর্ধিত আয়ের টাকাতেই নিকাশির সংস্কার, রাস্তাঘাট, আলো ও পানীয় জল সরবরাহের উন্নতি হয়েছে।’’