মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
সম্প্রতি নবান্ন সভাঘরে বিভিন্ন পুরসভার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, পরিষেবামূলক কাজের জন্য পুরসভাগুলি আলাদা করে দরপত্র ডাকতে পারবে না। সমস্ত সরকারি দরপত্র ডাকা হবে কেন্দ্রীয় ভাবে। তাঁর সেই ঘোষণার পরে দরপত্র ডাকা বন্ধ করে দেয় হাওড়া পুরসভা। যার ফল, রাস্তা সংস্কার থেকে শুরু করে পাইপলাইন বসানোর মতো পুর পরিষেবামূলক যাবতীয় কাজ প্রায় স্তব্ধ হতে বসেছে শহরে। পুরকর্তাদের দাবি, বর্ষার শুরুতেই একাধিক রাস্তায় পিচের আস্তরণ উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে বিশাল বিশাল গর্ত। অথচ, রাস্তা সারাইয়ের কাজে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। কোনও কোনও এলাকায় আবার শুরু করা যাচ্ছে না পানীয় জলের পাইপলাইন বদলানোর কাজ।
টিকিয়াপাড়ার কাছে ইস্ট-ওয়েস্ট বাইপাস, হাওড়া ময়দানের কাছে পঞ্চাননতলা রোড এবং নেতাজি সুভাষ রোড হাওড়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। সেখান দিয়ে বাসের পাশাপাশি চলে বড় বড় ট্রাক এবং ভারী যান। চলতি বছরে বর্ষা ভাল ভাবে শুরু না হতেই সংশ্লিষ্ট রাস্তাগুলির বিভিন্ন জায়গায় পিচের আস্তরণ উঠে ছোট-বড় গর্তে ভরে গিয়েছে। মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। বিশেষত টোটো এবং মোটরবাইক উল্টে একাধিক ক্ষেত্রে আহত হয়েছেন যাত্রীরা। পরিস্থিতি সামলাতে কয়েক জায়গায় পেভার ব্লক বসিয়েছে পুরসভা। কিন্তু পুর ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশেরই প্রশ্ন, আগামী কয়েক মাস বর্ষা চলার পরে এই ‘জোড়াতালি’র মেরামতি টিকবে তো?
পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘বড় গর্তগুলি পেভার ব্লক দিয়ে বুজিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তা না হলে বর্ষার জমা জলে ওই গর্ত বুঝতে পারবেন না পথচলতি মানুষ বা গাড়িচালকেরা। কিন্তু অবিলম্বে রাস্তাগুলির আমূল সংস্কার দরকার। এ ভাবে জোড়াতালি দিয়ে পুরো বর্ষা চলবে কিনা, সন্দেহ আছে।’’
পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলি মেরামত করতে গেলে যে অর্থের প্রয়োজন, তা সরকারি ভাবে দরপত্র না ডেকে করা সম্ভব নয়। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, সমস্ত দরপত্র কেন্দ্রীয় ভাবে ডাকবে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। যদিও রাজ্য সরকারের তরফে এখনও সে ব্যাপারে লিখিত নির্দেশনামা আসেনি। তবে যে হেতু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, তাই পুর কর্তারা দরপত্র ডাকার ‘সাহস’ দেখাতে পারছেন না।
কিন্তু প্রশ্ন হল, বর্ষা আসার আগে রাস্তা মেরামতি কিংবা পানীয় জলের পাইপলাইন বদলানোর কাজ কেন শেষ করেনি হাওড়া পুরসভা? পুর চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এপ্রিল থেকে প্রায় দু’মাস লোকসভা ভোট চলেছে। ওই সময়ে আদর্শ আচরণবিধি জারি থাকায় কোনও দরপত্র ডাকা যায়নি বা পরিষেবামূলক কাজও করা যায়নি।’’