হাওড়া পুরসভা। —ফাইল চিত্র। Sourced by the ABP
হাওড়া শহরে বেআইনি বহুতলের রমরমা রুখতে এ বার বড়সড় সিদ্ধান্ত নিল পুরসভা। ঠিক হয়েছে, এখন থেকে যে সব বাড়ি বা বহুতলের নকশা পুরসভা অনুমোদন করবে, সেগুলি বিস্তারিত ভাবে দিয়ে দেওয়া হবে পুরসভার ওয়েবসাইটে। শহরের নাগরিকেরা সেই ওয়েবসাইট খুললে সংশ্লিষ্ট বাড়ি বা বহুতলের অনুমোদিত নকশা দেখতে পাবেন। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, এর ফলে এক দিকে যেমন বেআইনি বহুতল তৈরির প্রবণতা আটকানো যাবে, তেমনই বাড়ির নকশা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা প্রতিফলিত হবে মানুষের কাছে।
হাওড়া পুরসভার দেওয়া হিসাবই বলছে, বর্তমানে শহরে বেআইনি বহুতলের সংখ্যা সাত হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই প্রবণতা ঠেকাতে গত বছর পুরসভার পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল, সমস্ত নির্মীয়মাণ বহুতলের সামনে নোটিস বোর্ড করে সেখানে পুরসভার অনুমোদিত নকশা টাঙিয়ে রাখতে হবে। যাতে সকলে জানতে পারেন, কত দূর পর্যন্ত সেই বহুতলটির অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, সেই নির্দেশের পরেও দেখা গিয়েছে, অনেকেই নির্মাণকাজ চলাকালীন পুর অনুমোদিত নকশা টাঙিয়ে রাখার পরোয়া করেননি। শুধু তা-ই নয়, দোতলা পর্যন্ত তৈরির অনুমোদন নিয়ে পাঁচ থেকে ছ’তলা পর্যন্ত নির্মাণও অবলীলায় হয়ে গিয়েছে।
পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী সোমবার বলেন, ‘‘অনুমোদিত নকশার বাইরে গিয়ে পাঁচ-ছ’তলা যত বহুতল তৈরি হয়েছে, আমরা ইতিমধ্যেই সেগুলির তালিকা তৈরি করেছি। এখনও পর্যন্ত ১৫টি এমন বহুতলের সন্ধান মিলেছে। সেগুলির বেআইনি অংশ অবিলম্বে ভাঙা শুরু হবে।’’ তিনি জানান, বার বার বলা সত্ত্বেও বহুতলের নির্মাণকারীরা বাড়ির সামনে নোটিস বোর্ডে অনুমোদিত নকশা টাঙাচ্ছেন না। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন থেকে যে সব বহুতলের নকশা পুরসভা অনুমোদন করবে, সেগুলি পুরসভার ওয়েবসাইটে দিয়ে দেওয়া হবে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর থেকে অনলাইনে বাড়ির
নকশার অনুমোদন দেওয়া শুরু হওয়ার পরে অনুমোদনের সংখ্যা আগের থেকে অনেকটাই বেড়েছে। ২০২৩-২৪ সালে অনলাইনে যেখানে ৯৪টি নকশা অনুমোদন করা হয়েছিল, ২০২৪-২৫ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৮১টি।
একই সঙ্গে চেয়ারপার্সনের দাবি, ২০২১ সালের পরে বর্তমান বছর পর্যন্ত বহুতল নির্মাণে বিচ্যুতির (ডিভিয়েশন) সংখ্যাও অনেক কমেছে। ২০২১-২২ সালে পুরসভা অনুমোদিত নকশা থেকে বিচ্যুতির সংখ্যা ছিল ৪৪৯টি। চলতি অর্থবর্ষে (২০২৪-২৫) তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৫৭টিতে। তিনি বলেন, ‘‘বেআইনি বহুতল ভাঙার সংখ্যা বর্তমান বছরে বেড়েছে। ২০২৩-২৪ সালে পুরসভা ১০৭টি অবৈধ বহুতল ভেঙে দিয়েছিল। ২০২৪-২৫ সালে এখনও পর্যন্ত ভাঙা হয়েছে ১৪০টি অবৈধ বহুতল। এই সংখ্যা যাতে আরও বাড়ানো যায়, তার জন্য বাড়ি ভাঙার দলের (ডেমোলিশন স্কোয়াড) সংখ্যা দুই থেকে বাড়ানো হবে।’’
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গেলে পুর প্রশাসনের অর্থব্যয় হয়। তাই ঠিক হয়েছে, এ বার থেকে অবৈধ বহুতল ভাঙার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ভিডিয়োগ্রাফি করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট বহুতলের কতটা অংশ ভাঙা হল, বর্গফুট হিসাবে সেই মাপ পুরসভায় জমা দিতে হবে। তবেই ওই নির্মাণ ভাঙার জন্য যে খরচ হয়েছে, সেই টাকা সংশ্লিষ্ট দলকে দেওয়া হবে।