—প্রতীকী চিত্র।
হাওড়া জেলা হাসপাতালের সিটি স্ক্যান বিভাগে এক কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পরে সেখানে রাতের ডিউটিতে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলল খোদ ওই হাসপাতালেরই অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি। সোমবার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের ঘরে হওয়া একটি বৈঠকে এই প্রশ্ন তুলে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির সদস্যেরা অবিলম্বে হাসপাতালে রাতের ডিউটিতে থাকা মহিলা কর্মীদের আতঙ্ক কমাতে এক গুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রস্তাবগুলি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হচ্ছে। এ দিকে, কিশোরী রোগিণীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ধৃত আমন রাজকে এ দিন হাওড়ার পকসো আদালতে তোলা হলে তাকে সাত দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
গত শনিবার গভীর রাতে সিটি স্ক্যান করানোর সময়ে সেই ঘরেই আমন ওই কিশোরীকে যৌন নির্যাতন করে বলে অভিযোগ। সেই রাতেই পুলিশ তাকে পকসো আইনে গ্রেফতার করলেও এই ঘটনা ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে হাওড়া। ঘটনার পরের দিন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কিশলয় দত্ত জানান, ঠিক কী ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্ত করে দেখবে হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি। তার পরেই হাসপাতালের নিরাপত্তা কী ভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ দিন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের ঘরে হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির বৈঠক বসে। সেই রাতে ঠিক কী ঘটেছিল, তা নিয়ে বৈঠকে রিপোর্ট দেন কমিটির সদস্যেরা। জানা গিয়েছে, ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বুধবার ওই কিশোরীকে হাসপাতালের যে চিকিৎসক দেখেছিলেন, তিনি সিটি স্ক্যান, রক্ত ও থুতু পরীক্ষা করাতে দিয়েছিলেন। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কোনও পরীক্ষাই করানো হয়নি। সেই রাতে হঠাৎই ওই কিশোরীকে সিটি স্ক্যান করাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার সঙ্গে কোনও মহিলা কর্মী ছিলেন না। এক জন গ্রুপ-ডি কর্মী তাকে ট্রলিতে করে সেই ঘরে নিয়ে যান। তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দিনকয়েক ধরে খারাপ হয়ে পড়ে থাকা সিটি স্ক্যান যন্ত্রটি যে সারানো হয়েছে, সেই তথ্য পিপিপি মডেলে চলা সিটি স্ক্যানের বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাননি। এমনকি, হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে কর্মরত যে দু’জন নার্স ওই কিশোরীকে সিটি স্ক্যান করাতে পাঠিয়েছিলেন, তাঁরাও সে বিষয়ে তখন জানাননি।
এই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে তদন্ত কমিটির দুই সদস্যা, নার্সিং সুপার ও সহকারী সুপারকে রাতে এক দিন অন্তর হাসপাতালে ডিউটি করার জন্য সুপারিশ করেন। তখনই কমিটির পক্ষ থেকে কর্মরত নার্স ও মহিলা কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। একই সঙ্গে অভিযোগ করা হয়, হাসপাতালের বহু জায়গায় পর্যাপ্ত আলো না থাকায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে। রাতে হাসপাতাল চত্বরে ঘুরে বেড়ান নেশাগ্রস্ত লোকজন। অবাধে পার্ক করা থাকে অ্যাম্বুল্যান্স, টোটো, রিকশা।
বৈঠকের পরে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির সঙ্গে আলোচনার পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, রাতে পুলিশকর্মীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রতিটি শিফটে চার জন করে পুলিশকর্মী হাসপাতাল চত্বরে ঘুরে পাহারা দেবেন। রাতে বাইরের কোনও যানবাহন হাসপাতালে রাখা যাবে না। হাসপাতালের যে সব জায়গায় পর্যাপ্ত আলো নেই, সেখানে আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘এই সমস্ত সিদ্ধান্ত রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আগামী দিনে হাওড়া জেলা হাসপাতালে এই ধরনের ঘটনা আর যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’’