তাপমাত্রা কমতেই আগুনে হাত গরম করতে ব্যস্ত। গোঘাটের কামারপুকুর লাহাবাজারে। নিজস্ব চিত্র।
পৌষের শেষ আর মাঘের শুরুতে জমিয়ে ব্যাটিং শুরু শীতের। শনিবার থেকেই পারদ নামতে শুরু করেছে হাওড়া ও হুগলিতে। আর সোমবার ভোরে কুয়াশার চাদরে ঢেকেছে এলাকা। রোদের দেখা মিলছে সকাল ১০টার পরে।
কুয়াশার জেরে এ দিন হাওড়ার দক্ষিণ-পূর্ব শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হয় যাত্রীদের। তবে রেলকর্তাদের দাবি, লোকাল ট্রেন দেরিতে চললেও দূরপাল্লার ট্রেনের কোনও সমস্যা হয়নি। কুয়াশার জেরে চুঁচুড়া-নৈহাটি লঞ্চ পরিষেবায় সাময়িক বিঘ্ন ঘটে। সকাল ৮ টা পর্যন্ত স্বাভাবিকের তুলনায় ধীরঘতিতে লঞ্চ চলেছে।
সকালের দিকে হুগলির জিটি রোডে দৃশ্যমানতা ছিল কম। ফলে, গাড়ির গতিও ছিল শ্লথ। গাড়ির আলো জ্বেলে চলছিল যাতায়াত।
পান্ডুয়া, মগরা, পোলবা থানার পুলিশ রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে নাকা করছিল। হুগলি জেলা গ্রামীণ পুলিশের এক আধিকারিক জানান, মকর সংক্রান্তির জন্য কলকাতাগামী লরি এবং ট্রাক আটকে দেওয়া হয়েছে। রবিবার রাত দুটো থেকে বৈঁচির কোঁচমালি, মগরার বোড়োপাড়া মোড়, পোলবার সুগন্ধায় নো এন্ট্রি চলছে। তাঁর কথায়, ‘‘এমন কুয়াশাচ্ছন্ন অবস্থায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু যান নিয়ন্ত্রণের ফলে দুর্ঘটনায় অনেকটাই লাগাম দেওয়া গিয়েছে।’’
গঙ্গার ঘাটগুলিতে মকর স্নানে ভিড় ছিল কম। হাড়কাঁপানো ঠান্ডার জেরেই এই অবস্থা বলে অনুমান পুলিশের।
কনকনে ঠান্ডায় কাজে পৌঁছতেও দেরি হয়েছে অনেকের। ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা উলুবেড়িয়ার এক যুবক হেসে বলেন, ‘‘এমন শীতে নড়তে ইচ্ছে করছে না। বাধ্য হয়ে কাজে বেরোতে হচ্ছে।’’ এ দিন স্কুলে ঢুকতে দেরি হয়েছে দুই জেলার বহু পড়ুয়ার। মেয়েকে ডানকুনির এক স্কুলে ঢুকিয়ে এক অভিভাবিকা বলেন, ‘‘অন্য দিন এক মিনিট দেরি হলে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ দিন ঠান্ডা বেশি বলেই দিদিমণি কিছুটা ছাড় দিয়েছেন।’’
তবে এমন জোরাল ঠান্ডায় খুশি অনেকেই। সাঁকরাইলের এক গৃহিণীর কথায়, ‘‘এ বার ঠান্ডায় তেমন পড়েছিল কোথায়? কম্বলই বের করতে হয়নি। কাঁথাতেই কাজ হয়ে যাচ্ছিল। শনিবার তোরঙ্গ থেকে লেপ-কম্বল বের করেছি। শীতকালে ঠান্ডা না পড়লে হয়?’’ কুয়াশার মধ্যে ভোরে ভিড় বেড়েছে চায়ের দোকানগুলিতেও। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে উত্তরপাড়ার এক বৃদ্ধ বলেন, ‘‘পৌষের শেষে ঠান্ডা পড়বেই। তবে না পিঠে, পায়েস খেতে ভাল লাগবে!’’
শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলিতে এ দিন সকাল থেকে বেলা প্রায় ১১টা পর্যন্ত কুয়াশায় ঢাকা ছিল আকাশ। ঘুড়িপ্রেমীরা অপেক্ষায় ছিলেন কখন আকাশ পরিষ্কার হয়, সেই আশায়। বেলা ১২টার পরে রোদের দেখা মেলে। পেটকাটি, চাঁদিয়াল, ময়ূরপঙ্খী, কানকাট্টির ঝাঁকের দেখা মেলে আকাশে।