এখানেই ছিলেন মুজিবুর। নিজস্ব চিত্র।
ছেচল্লিশের দাঙ্গায় শ্রীরামপুরে এসে অবাক হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গঙ্গাপাড়ের এই শহরের সম্প্রীতি ছুঁয়ে গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে। সে কথা তিনি লিখে রেখে গিয়েছেন তাঁর আত্মজীবনীতে। শ্রীরামপুরে যে বাড়িতে এসে তিনি উঠেছিলেন, সেই বাড়ির খোঁজ মিলেছে।
বাংলাদেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও গবেষণামূলক সংগঠন ‘হাসুমনির পাঠশালা’র তরফে হুগলিতে এসেছেন সে দেশের সঙ্গীতজ্ঞ শামসুল হুদা। বৃহস্পতিবার তিনি শ্রীরামপুরের টিকিয়াপাড়ার ওই বাড়িতে যান। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি। শামসুলের কথায়, ‘‘এ যেন ইতিহাসের পুনরুদ্ধার।’’ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিবুরের কন্যা। হাসিনার নাম থেকেই ‘হাসুমনির পাঠশালা’র নামকরণ।
বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে শ্রীরামপুরের প্রসঙ্গ পড়ে বলাগড় বিজয়কৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায় বছর কয়েক আগে এই বাড়ির খোঁজ শুরু করেন। এরই মধ্যে ‘হাসুমনির পাঠশালা’র সঙ্গে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক তৈরি হয় জিরাট কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের। পার্থবাবু ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি। তিনি বাংলাদেশের ওই সংগঠনের কর্মকর্তাদের কাছে ওই বাড়িটির বিষয়ে জানান। তাঁরাও আগ্রহী হন। পার্থবাবু জানান, শেওড়াফুলি রাজবাড়ির বর্তমান বংশধর আশিস ঘোষের চেষ্টায় সম্প্রতি ওই বাড়ির খোঁজ মেলে। কেন শ্রীরামপুরে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু?
পার্থবাবু জানান, ১৯৪৬ সালে কলকাতায় পড়াশোনা করতেন যুবক মুজিবুর। তাঁর ভাই শেখ নাসের শ্রীরামপুরে পড়াশোনা করতেন। নাসের ছাড়াও তাঁদের একাধিক আত্মীয় থাকতেন শ্রীরামপুরে। নাসের শারীরিক ভাবে দুর্বল ছিলেন। ওই বছর দাঙ্গার সময় ভাই এবং আত্মীয়েরা কেমন আছেন, সেই খোঁজ নিতেই মুজিবুর শ্রীরামপুরে আসেন। এই শহরের সম্প্রীতি দেখে তিনি অবাক হয়ে যান। শ্রীরামপুর স্টেশনে হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি বসে ব্যবসা করছেন, সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে চলছেন দেখে তিনি অবাক হয়ে ভাবেন, কলকাতায় তখন হিন্দু-মুসলমান কী ভাবে রক্তের হোলি খেলায় মেতেছে! এ সবই মুজিবুর লিখে গিয়েছেন তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র পাতায়।
পার্থবাবুর কথায়, ‘‘বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতে শ্রীরামপুরের কথা পড়ে একটা শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হয় আমার মনে। বঙ্গবন্ধুকে কোনও কাঁটাতারে ভাগ করা যায় না। তিনি গোটা পৃথিবীর বাঙালির আবেগ। সেই তাড়নাতেই শ্রীরামপুরে তাঁর স্মৃতিধন্য বাড়িটির খোঁজ শুরু করি।’’ তিনি আরও জানান, টিকিয়াপাড়া মসজিদের কাছে ছিল সবুর মিয়াঁর বাড়ি। তাঁর বাড়িতেই ছিলেন নাসের। এখানেই মুজিবুর এসেছিলেন। ওই বাড়ির পাশেই নব্বই পেরনো শেখ আনসার আলি এবং মহম্মদ আলাউদ্দিন থাকেন। মুজিবকে নিয়ে শামসুল-পার্থেরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। ওই বাড়িতে মুজিবুরের স্মৃতিতে কিছু করা যায় কি না, সেই বিষয়টি তাঁরা ভাবছেন। এখানে দাঁড়িয়েই শামসুল এ নিয়ে ফোনে কথা বলেন বাংলাদেশ সরকারের এক পদস্থ আধিকারিকের সঙ্গে।