চণ্ডীতলায় নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধারের ঘটনায় পাঁচ জনকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: দীপঙ্কর দে Sourced by the ABP
পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে অন্তত ৮ জনের মৃত্যুর পরেই হুগলিতে পুলিশের ব্যস্ততা বেড়েছে। নানা জায়গায় হানা দিয়ে বেআইনি বাজি বাজেয়াপ্ত করছে তারা। পুলিশের বক্তব্য, বেআইনি বাজির বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলে। এগরা-কাণ্ডের পরে তারা আরও সতর্ক।
সাধারণ মানুষের একাংশের অবশ্য অভিযোগ, পুলিশের এমন অভিযান নিয়মে বাঁধা। যেমন, এখন হচ্ছে। যেমন হয় কালীপুজোর মুখে। যত বাজি বাজেয়াপ্ত হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি লুকোনো থাকে। অভিযানে বাজি-কারিগরদের ধরা হয়। রাঘব বোয়ালরা গভীর জলেই থাকেন। এই পরিস্থিতিতে বেআইনি বাজি কারখানা তুলে ফেলার দাবিতে ফের সরব এই জেলার পরিবেশকর্মীরা। পুলিশ-প্রশাসন থেকে নবান্নের কর্তাদের কাছে তাঁরা দরবার করছেন।
হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশের দাবি, বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত অভিযানে মোট ৭৮০ কেজি নিষিদ্ধ শব্দবাজি, ৮০ কেজি বাজি তৈরির মশলা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কারিগর-ব্যবসায়ী মিলিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ১১ জনকে। চণ্ডীতলার বেগমপুর থেকে ৫ জন গ্রেফতার হয়েছে প্রায় ৬০০ কেজি শব্দবাজি, ১৪ কেজি বাজির মশলা-সহ। ৯০ কেজি শব্দবাজি-সহ খানাকুলের নতিবপুরের দুই ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়েছে। গোঘাটের বালি পঞ্চায়েতের ছোট ডোঙ্গলের এক বিক্রেতাকেও ধরা হয়েছে। তার কাছে মিলেছে ১০ কেজি শব্দবাজি। সব ক্ষেত্রেই ধৃতদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
রাজ্যজুড়ে বাজি কারখানায় একের পর এক বিস্ফোরণ, মৃত্যুমিছিল, সামাজিক, পরিবেশগত ক্ষতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বছরের পর বছর পুলিশ-প্রশাসন, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দরজা ধাক্কাচ্ছে চন্দননগরের পরিবেশ অ্যাকাডেমি। এ নিয়ে গত ২৭ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও দেয় তারা। এগরা-কাণ্ডের পরে এ বার রাজ্যের পরিবেশ দফতরের প্রধান সচিব, ডিজি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সদস্য সচিবকেও চিঠি দিল ওই সংগঠন। তাতে গত দেড় দশকে রাজ্যের নানা জায়গায় বাজি বিস্ফোরণে হতাহতের তালিকা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, বাজি তৈরির আড়ালে বিভিন্ন কারখানায় বোমাও তৈরি হয়। নির্বাচন-সহ নানা সময়ে বোমা তৈরির বরাত মেলে।
পরিবেশ অ্যাকাডেমির কর্মকর্তাদের দাবি, এগরার দুর্ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন, পর্ষদ, রাজ্য সরকার দায় এড়াতে পারে না। ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা, বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধের পাশাপাশি তাঁদের আরও দাবি, এই ধরনের দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। বাজি তৈরির জন্য নির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিত করা হোক সব আইন মেনে।
ওই সংগঠনের সম্পাদক শংকর কুশারী জানান, এই বিষয়ে কলকাতাহাই কোর্টে একটি জনস্বার্থের মামলা পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন। প্রয়োজনে পরিবেশ আদালতে মামলা রুজু করা হবে।হুগলিতে বেগমপুর, চণ্ডীতলা, হরিপাল, খানাকুল, গোঘাট, পান্ডুয়া, ডানকুনি-সহ নানা জায়গায় বাজি তৈরি হয়। অতীতে অনেক জায়গাতেই বিস্ফোরণ এবং তার জেরে প্রাণহানি হয়েছে।
এগরার ঘটনার প্রেক্ষিতে বেআইনি সমস্ত বাজি কারখানা বন্ধের দাবিতে হুগলির জেলাশাসক, এসপি, চন্দননগরের পুলিশ কমিশনারকে ই-মেল পাঠিয়েছে বাজি ও ডিজে বক্স বিরোধী মঞ্চ। রাজ্যের সর্বত্রই এই পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন মঞ্চের সদস্যরা। তাঁদের ক্ষোভ, বাজি কারখানায় প্রচুর মহিলা, শিশুকে কাজে লাগানো হয়। কম মজুরিতে তাঁদের খাটানো যায়। বহু ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার বলি তাঁরাই হন।
তথ্য সহায়তা: দীপঙ্কর দে,পীযূষ নন্দী।