উইলিয়াম রক্সবার্গ। Stock Photographer
শ্রীরামপুর কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা উইলিয়াম কেরির পরিচিতি মূলত খ্রিস্টান মিশনারি, সমাজ সংস্কারক এবং সংস্কৃতিমনস্ক হিসেবে। কিন্তু গাছ নিয়ে তাঁর কর্মকাণ্ড তেমন চর্চিত নয়। শ্রীরামপুর মিশনের পাশে ছয় একর জমিতে বটানিক্যাল গার্ডেন তৈরি করেছিলেন কেরি। ১৮০০ সালে এই কাজ শুরু হয়। কয়েক হাজার প্রজাতির গাছ ছিল। এটিকে ‘কেরির বাগান’ও বলা হত।
হাওড়ার শিবপুরে বটানিক্যাল গার্ডেন তৈরি ১৭৮৬ সালে। তখনকার নাম ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বটানিক্যাল গার্ডেন’। দুই জেলার দুই বটানিক্যাল গার্ডেনের মধ্যে যোগ ছিল। কেরি যেতেন শিবপুরে, শ্রীরামপুরে আসতেন শিবপুর বটানিক্যাল গার্ডেনের সুপারিনটেন্ডেন্ট ডক্টর উইলিয়াম রক্সবার্গ। তাঁরা ছিলেন পরম সুহৃদ। উদ্ভিদ বিজ্ঞানের উপরে রক্সবার্গের দু’টি বিখ্যাত বই শ্রীরামপুর মিশন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল কেরির সৌজন্যে।
রক্সবার্গ এতটাই কেরির গুণমুগ্ধ ছিলেন এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞানী হিসেবে সম্মান করতেন যে কেরির নামে দু’টি গাছের নামকরণ করেন। একটি শাল গাছের নাম দেন ‘কেরিয়া আরবরিয়া’। এই পর্ণমোচী বৃক্ষ প্রায় ৪৫ ফুট উঁচু হয়। এর পাতা শীতকালে লালচে হয়ে যায়। ফুল হলুদ বা সাদা। ভারতের বিভিন্ন জঙ্গলে, সমভূমেও এই গাছ দেখা যায়। অন্যটি অর্কিডজাতীয় ফুলগাছ। রক্সবার্গ নাম রাখেন ‘বুলবফিলাম ক্যারিয়ানাম’। এই ফুল সাধারণত আধ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের হয়। তীক্ষ্ণ অগ্রভাগযুক্ত কন্দজাতীয় বাদামি ফুলটির পিঠে ছোট ছোট অনেক গুটি থাকে। এটি পূর্ব হিমালয়, অসম, নেপাল প্রভৃতি অঞ্চলে মেলে।
১৮২৩ সালে বর্ষাকালে ২৪ ঘণ্টার একটানা বৃষ্টিতে জলস্তর পাঁচ ফুটের উপরে বেড়ে গিয়ে কেরির সাধের বাগান ভয়ঙ্কর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গঙ্গার ধারে মনোরম পরিবেশে ‘কেরির বাগান’ বা শ্রীরামপুর বটানিক্যাল গার্ডেন পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক চাপে মিশনারিরা বিক্রি করে দেন। বর্তমানে এই জায়গায় ইন্ডিয়া জুট মিল দাঁড়িয়ে।
সূত্র: হারাধন রক্ষিত, প্রাবন্ধিক।