Chandannagar

Chandannagar: কোম্পানির হাত থেকে ফরাসি সরকার যে চন্দননগর পায় তা ছিল বিধ্বস্ত, নিঃস্ব

ফরাসি মাঁর্ত্যা, দেলাদঁ ও পেলের পত্রকে গুরুত্ব দিলে আধুনিক চন্দননগরের জন্ম ১৬৯৬ সালে। দ্যুপ্লের শাসনে চন্দননগর ছিল ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির স্বর্ণযুগ।

Advertisement

শুভ্রাংশুকুমার রায়

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৭:৪৫
Share:

চন্দননগর জোড়া ঘাট। ছবি: সংগৃহীত।

সরস্বতী ও ভাগীরথী, দুই নদীর দোলনে চন্দননগরের প্রাকৃতিক চেহারা স্পষ্ট হলেও প্রাক-ঔপনিবেশিক চন্দননগরের রাজনৈতিক চেহারা তুর্কি শাসন অবধি দানা বাঁধেনি। এর পর মুঘল শাসনেও ভৌগোলিক চেহারা ছিল অবিন্যস্ত। মুঘল শাসনকালে মূলত ঔরঙ্গজেবের সাড়া ও সায় নিয়ে ফরাসিরা আসে চন্দননগরে। দিনেমার ও অন্যান্য ইউরোপীয় কোম্পানিও ধীরে ধীরে কুঠি নির্মাণ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে তোলে।

Advertisement

ফরাসিরা মুঘলদের থেকে অধিকার নিয়ে কিছু স্বনামে বাকি বেনামে জমি কিনে ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বাড়ায়। ইতিমধ্যে মরাঠা বর্গীর আক্রমণ, চৈতন্যকেন্দ্রিক বৈষ্ণব ধর্মের প্রসার, সরস্বতী নদী শীর্ণকায়া হওয়া, সপ্তগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব হ্রাস ইত্যাদি নানা কারণে পশ্চিম ও উত্তর দিক থেকে নানা মানুষ আসতে থাকেন চন্দননগরে। ক্রমশ ধীবর, হাড়ি, পাইক, মালো, কৈবর্ত, নিকিরি, বাগদী, ডোম, চাষি— চন্দননগরের আদি অধিবাসীরা প্রান্তিক হতে থাকেন। একদা নদী ভূমি আকাশ এদের সবার সম্পদ ছিল। কার কাছেই বা দাবি করবে? যা পাওয়া যেত তাতেই চলে যেত মিলেমিশে।

ফরাসি মাঁর্ত্যা, দেলাদঁ ও পেলের পত্রকে গুরুত্ব দিলে আধুনিক চন্দননগরের জন্ম ১৬৯৬ সালে। দ্যুপ্লের শাসনে চন্দননগর ছিল ‘ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’র স্বর্ণযুগ। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়। প্রমাদ গোনে ইংরেজরা। ফরাসি দুর্গ-সহ চন্দননগর ধ্বংস করে, লুঠ করে। ১৭৬৯ সালে কোম্পানির হাত থেকে ফরাসি সরকার যে চন্দননগর পায় তা, বিধ্বস্ত, নিঃস্ব। ব্যবসা-বাণিজের প্রসারে জনপদ ও গ্রাম প্রসারিত হলে চন্দননগরে নবাগত শিক্ষিত সচেতন অধিবাসীদের স্বর স্পষ্ট হতে থাকে। তবে সর্বসাধারণের নয়, সর্বত্র ফরাসি প্রশাসকদের কথাই চলত।

Advertisement

ভারতে অন্য চারটি ফরাসি উপনিবেশের মতো চন্দননগর ছিল পুদুচেরির শাসনাধীন। সমগ্র ফরাসি ভারতে ছিলেন এক জন মাত্র গভর্নর। তাঁর অধীনে প্রত্যেক উপনিবেশ পরিচালনার জন্য থাকতেন এক জন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। চন্দননগরে অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের সঙ্গে আদালত, কালেক্টরেট, শিক্ষা বিভাগ, পূর্ত বিভাগ, সেনা— সব ছিল পুদুচেরির অধীন। আইনকানুন প্রণয়ন করেছেন ফরাসি সরকারের মন্ত্রীরা। ফ্রান্সের ডেপুটি ও সিনেটারদের কাউন্সিলে ফরাসি ভারতের নাগরিক ও প্রতিনিধিদের দ্বারা নির্বাচিত হতে পারতেন এক জন ডেপুটি এবং এক জন সিনেটার প্রতিনিধি।

চন্দননগরের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত হওয়ার অধিকার থাকলেও ডেপুটি ও সিনেটারদের কাউন্সিলে ভারতীয় প্রতিনিধির স্থান হয়নি। ১৮১৬ সালে ইংরেজদের হাত থেকে স্থায়ী ভাবে চন্দননগরের দখল পেয়ে ফরাসিরা ১৮৮০ সাল অবধি দীর্ঘ ৬৪ বছর মোটামুটি এ ভাবেই চালায়। সাধারণ মানুষের ক্ষোভ-অসন্তোষ ছিল না তা তো বলা যায় না। আসলে অধিকাংশ মানুষ এই ফরাসি শাসন ভবিতব্য হিসাবে মেনে নিয়েছিলেন। বাইরে থেকে জনজীবন মনে হত নিস্তরঙ্গ, কোলাহলহীন। শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, চিকিৎসার বিকাশ ঘটেছে পরিকল্পনা করে নয় বরং ফরাসিদের খেয়ালখুশি অনুযায়ী, তাদের নিজেদের মতো করে।

এটা পরে লোকমুখে ফরাসিদের অবদান হয়ে যায়। শেঠ, রক্ষিত, ঘোষ, নন্দী, পাল, শ্রীমানী, বসু, মণ্ডল, ভড়, ব্যানার্জী প্রমুখ দেশীয় পরিবারেরও অবদান ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্যে বিভিন্ন সম্পর্ক ও সহযোগিতার কারণে ফরাসি শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা তাদের কাছে দাবি তোলার আওয়াজ স্পষ্ট হয়নি প্রথম দিকে।

১৮৮০ সালে মেট্রোপলিটন ডিক্রি বলে ফরাসি দেশে প্রচলিত পুর প্রশাসনের রীতি অনুসারে ভারতে তথা এই চন্দননগরে পুরপ্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু হয়। চন্দননগরে পুরপরিষেবা-সহ প্রশাসনিক কার্যাদি পরিচালনার জন্য মিউনিসিপ্যালিটি গঠন করে। ৬ বছরের মেয়াদে কাউন্সিলারদের কাউন্সিল ও কমিউন বা আমাদের ধারনায় পঞ্চায়েত গঠিত হয়। কাউন্সিলের প্রধান মেয়র। ফরাসি ভারতের জনগণ তথা চন্দননগরের জনগণ এ ভাবে এখানে প্রত্যক্ষ ভাবে ফরাসি পুর প্রশাসনিক পরিচালন ব্যবস্থার অধীন হলেন। বলা বাহুল্য, ফরাসি নাগরিকদের মতো সুযোগসুবিধা পেতেন না দেশীয়রা। কারও ক্ষোভ চাপা ছিল। কেউ ভাবতেন এটাই নিয়তি।

পণ্ডিচেরি (এখনকার পুদুচেরি) তখন রাজধানী। ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লবের সুমহান প্রভাব থাকলেও চন্দননগর মুক্ত হয়নি, সে ফরাসি অধীন। পণ্ডিচেরির জেনারেল কাউন্সিলে নির্বাচকমণ্ডলীর দুটো তালিকা প্রস্তুত করা হত। ফ্রান্স থেকে আসা ফরাসি, ভারতীয় ফরাসি ও ফরাসি আইন মেনে চলতে অঙ্গীকারবদ্ধরা থাকতেন ‘রেনসাঁ’রা অগ্রাধিকার প্রাপ্তের তালিকায় । ফরাসি শাসনাধীন এলাকায় বসবাসকারী ভারতীয়েরা থাকতেন দ্বিতীয় তালিকায়। এলাকায় ছিল সাদা-কালো সুবিধা-অসুবিধার বিভাজন।

চন্দননগর স্টেশন। ছবি: সংগৃহীত।

স্বাভাবিক ভাবেই ফরাসি শাসনের বিরুদ্ধে চন্দননগরের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। প্রতিবাদ জোরালো হয়। আবার কেউ স্থানীয় প্রজাবন্ধু পত্রিকায় স্নেহময়ী জননী ফ্রান্সের কাছে কাতর আবেদন জানান। ‘গোন্দলপাড়া বান্ধব সম্মিলনী’র তরুণরা এই আবেদন নিবেদন পছন্দ করতেন না। এই আন্দোলন প্রথম দিকে ছিল পুরসভাকেন্দ্রিক। পরে ভারতে রাজনীতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের চিত্র বদলালে চন্দননগরেও প্রভাব পড়ে কিন্তু স্বতন্ত্র ভাবে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবীরা অস্ত্র সংগ্রহ, আশ্রয়, গোপনীয়তা সংক্রান্ত কিছু সুবিধা পেলেও ইংরেজরা চন্দননগরে প্রবেশ করে বিপ্লবী হত্যা করে, গ্রেফতার করে।

১৯০৫ সালের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের হীন ষড়যন্ত্র ‘বঙ্গভঙ্গ’ কেন্দ্র করে ভারতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্যেই জন্ম নেয় বিপ্লবতীর্থ চন্দননগর। সশস্ত্র ও চরমপন্থী আন্দোলনে অতি গোপনে নেতৃত্ব দেয় নানা ভাবে। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের শোষণহীন সমাজব্যবস্থার পক্ষে এবং পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সাফল্য সমগ্র বিশ্বে পরাধীন জাতি ও নিপীড়িত শ্রমজীবী জনগণের মধ্যে অভূতপূর্ব আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিংশ শতকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রকাশ্য জাতীয়তাবাদী ধারার সঙ্গে চন্দননগর আলোড়িত হলেও সে ভাবে যুক্ত হতে পারেনি।

চন্দননগরের অধিবাসীরা প্রধানত পুরসভাভিত্তিক রাজনীতি করতেন। নারায়ণচন্দ্র দে, হরিহর শেঠ প্রমুখেরা গঠন করেছিলেন ‘প্রজা সমিতি’। লালবাগানের সাধুচরণ মুখোপাধ্যায় তৈরি করলেন ‘জন সম্মিলনী’। চারুচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠা করলেন ‘দেশহিতৈষী সভা’। এক দিকে বিপ্লববাদীদের গোপন কার্যকলাপ, অন্য দিকে পুররাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল চন্দননগর। ১৯২৯ সালে গড়ে ওঠে সংগঠন চন্দননগর যুব সমিতি ও এর অধীনে সংস্থা শিল্প সমবায়। বিপ্লববাদী রাজনীতি, জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ও রুশ বিপ্লবের প্রভাবে এই তিন ধারা পুষ্ট সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি চন্দননগরের পরবর্তী রাজনীতিতে এক প্রগতিশীল চেতনার সঞ্চার করে।

এর মধ্যে চন্দননগরে ফরাসি পুরসভার পরিষেবা সচল ছিল প্রধানত ভিল্‌ ব্লাঁশ বা ফরাসিদের সাদা চন্দননগরে যা ছিল বড়বাজারকেন্দ্রিক। জিটি রোডের পূর্ব দিকে এবং বাকি চন্দননগরে প্রভাবশালী পরিবাররা নিজেদের উদ্যোগে এলাকা উন্নত করতেন। আর ব্যবসা-বাণিজ্যের খাতিরে কিছু রাস্তা গুরুত্ব পেত। এর মধ্যে ফরাসি পরিকল্পিত এক সুন্দর শহরের সম্ভাবনা দেখা যায়।

ইতিমধ্যে দু’টি বিশ্বযুদ্ধ আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও স্থানীয় স্তরে নানা পরিবর্তন আনে। প্যারিস-পণ্ডিচেরি-চন্দননগর যোগসূত্রে সাম্যবাদ ও কমিউনিজম রাজনীতিকে সংঘববদ্ধ করে নানা ভাবে। অন্য দিকে, ভারতের স্বাধীনতা আসন্ন। ১৯৪৬ সালে ভারতবর্ষের ফরাসি উপনিবেশগুলোতে গড়ে ওঠে জাতীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা বা এনডিএফ। এই এনডিএফ-ও ফরাসি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ফরাসি সরকারের কাছে ফরাসি ভারতের উপনিবেশগুলোর স্বাধীনতা ও ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার দাবি জানায়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস তার নিজস্ব ধারায় আন্দোলন করে। পরিণামে একদা শুরু হয় নির্বাচন।

পুর পরিষদের নির্বাচনে এনডিএফ-এর অধিকাংশ প্রার্থী জয়ী হন। প্রমাদ গোনে ফরাসি সরকার ও তার স্বার্থবাহী কিছু অনুগত প্রজা। ইতিমধ্যে ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হয়। কিন্তু চন্দননগরে টালবাহানা, ফ্রি সিটি-র ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। অবশেষে ১৯৪৯ সালে গণভোটে চন্দননগরের মানুষ রায় দেন ভারত সরকারের অঙ্গ হিসেবে স্বাধীন চন্দননগরের পক্ষে। ১৯৫০ সালে কার্যত বা De Facto Transfer-এর মাধ্যমে ভারত সরকারের হাতে চন্দননগর অর্পণ করা হলেও ‘চন্দননগর মার্জার অ্যাক্ট ১৯৫৪’ অবধি অপেক্ষা করতে হয় পশ্চিমবাংলার অংশ হতে। এই দীর্ঘ সময়ে নানা দ্বন্দ্বের মধ্যে তৈরি হয় চন্দননগরের বিশিষ্ট প্রগতিশীল নাগরিকদের নিয়ে গঠিত প্রথমে সাময়িক ভাবে United Progressive Front, পরে স্থায়ী গণমঞ্চ ‘সংযুক্ত নাগরিক কমিটি’ বা United Citizens Committee। শুধু নির্বাচন নয়, শুধু পুর আন্দোলনও নয়, এই কমিটির উদ্দেশ্য তার কর্মধারা প্রসারিত হবে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা, শ্রমজীবী জনগণের স্বার্থে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও।

১৯৫৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় চন্দননগর পুর আইন প্রণয়ন ও গৃহীত হয়। ১৯৫৬ সালের ১৫ জানুয়ারি স্বাধীন চন্দননগরে অনুষ্ঠিত প্রথম পুর নির্বাচনে ২২টি আসনের মধ্যে ১৯টিতে জয়লাভ করলেন সংযুক্ত নাগরিক কমিটির প্রার্থীরা। ৫টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয় চন্দননগরকে। মোট আসন সংখ্যা ২৫। জনগণের দ্বারা সরাসরি নির্বাচিত হন ২২ জন কাউন্সিলর, বাকি ৩ অল্ডারম্যান নির্বাচিত হন কাউন্সিলরদের ভোটে। প্রথম মেয়র হন নারায়ণচন্দ্র দে।

চন্দননগর স্ট্র্যান্ড রোড। ছবি: সংগৃহীত।

এর পর পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে মূল্যবৃদ্ধি, দুর্ভিক্ষ, উদ্বাস্ত পুনর্বাসন, ভারত-চিন যুদ্ধ ইত্যাদি নানা সমস্যা গুরুতর হতে থাকে। এর প্রভাব পুর রাজনীতিতেও পড়ে। ১৯৬০, ১৯৬২, ১৯৬৭, ১৯৭১ পর পর জেতে সংযুক্ত নাগরিক কমিটি। ১৯৭২ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস চন্দননগর পুরসভা জবরদখল করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পরিবর্তে সরকারি আধিকারিক নিযুক্ত করে। ১৯৭৭ সালে রাজ্য রাজনীতির পরিবর্তন হয়। বিধানসভায় বামপন্থীরা জয়লাভ করে। বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রভাব পড়ে চন্দননগরের পুর রাজনীতিতে। ১৯৮১, ১৯৮৬, ১৯৯০ সালে জয়লাভ করেন বামপন্থীরা তথা সংযুক্ত নাগরিক কমিটির প্রার্থীরা। রাজ্যে বামফ্রন্টের স্থায়িত্বের সঙ্গে এই জয় স্বাভাবিক ঘটনা।

১৯৯০ সালে নতুন চন্দননগর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন অ্যাক্ট প্রণীত হয় যা চালু হয় ১৯৯৪ সালে। যুক্ত হয় খলিসানি অঞ্চল পঞ্চায়েত। পশ্চিম দিকের এই গ্রামাঞ্চলের অনেক দিনের দাবি পুরসভার সুযোগসুবিধার। সংযুক্তির পর চন্দননগরের এলাকা দ্বিগুণেরও বেশি হয়। চন্দননগর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের আসন সংখ্যা হয় ৩৩টি। এই সংযুক্তি নতুন উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। ১৯৯৫, ২০০০, ২০০৫ সালের পুর নির্বাচনে বামপন্থী ও সংযুক্ত নাগরিক কমিটির প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। এই সময়ে ৬ মাস অন্তর ওয়ার্ড কমিটির সভায় স্থানীয় ওয়ার্ডের নাগরিকদের পুরসভার কাজের বিবরণ জানিয়ে স্বচ্ছ পুর প্রশাসনের ধারা চালু রাখা হয়।

ইতিমধ্যে বামপন্থী রাজনীতি ও বামফ্রন্ট রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেস ও জাতীয় কংগ্রেসের প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। চন্দননগরে পুর রাজনীতিতে তারও প্রভাব পড়ে । ২০১০, ২০১৫ সালে তৃণমূল কংগ্রেস জয়লাভ করে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বিবাদে পুর পরিষেবা থমকে যায়। ২০১৮ সালে একাধিক মেয়র পারিষদ, বোরো চেয়ারম্যান, চেয়ারপার্সন-সহ ১৪ জন তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলর পুরকর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ, পরিষেবা কেনাবেচা, দুর্নীতি ইত্যাদি অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্যপালের নির্দেশে পুরবোর্ড বাতিলের নির্দেশ জারি হয়। পুরবোর্ড ভেঙে দেওয়ার পর তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও পুর নির্বাচন হয়নি। পুর পরিষেবা বিপর্যস্ত। পরিবেশ দূষণ চরমে। বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজনে নাগরিক-প্রাণ জেরবার। সবার আশা— এই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, চন্দননগরে পুরজীবনে স্বস্তি, সুখ, শান্তি আসবে।

আরও পড়ুন:

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement