পুজো মণ্ডপে রাখা বক্স (বাঁ দিকে)। তোরণে লাগানো মাইক। নিজস্ব চিত্র।
আজ, সরস্বতী পুজো। বাগদেবীর আরাধনায় সেজে উঠেছে হুগলি জেলার মগরার বিস্তীর্ণ এলাকা। মণ্ডপে মণ্ডপে থিমের ছড়াছড়ি। চতুর্দিকে আলোর মালা। তবে বিদ্যার দেবীর পুজো ঘিরে এখানে আশঙ্কায় ছাত্রছাত্রীরাই!
কেন? বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে বক্স এসেছে। রাস্তায় বাঁশের তোরণের মাথায় লাগানো হয়েছে মাইক। সে সব তারস্বরে বাজলে পরীক্ষার মুখে পড়াশোনার দফারফা হবে, এই ভয়ই পাচ্ছেন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। আগামী পরশু, শুক্রবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। ওই দিন পর্যন্তই মগরায় পুজো চলবে। বিসর্জন হবে পরের দিন।
মগরা থানার তরফে অবশ্য দিন কয়েক আগে সমন্বয় বৈঠকে পুজো কমিটির উদ্যোক্তা, মাইক-বক্স ব্যাবসায়ীদের এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ডিজে-বক্স তো বটেই, সাধারণ বক্স বা মাইকও চড়া শব্দে বাজানো যাবে না বলে পুলিশকর্তারা বৈঠকে জানিয়ে দেন। এর পরেও উৎসাহের আতিশয্যে নিয়ম ভঙ্গ করা হলে ওই সব সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত এবং মামলা করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। তবে বাস্তবে সত্যি সত্যি তেমন পরিস্থিতি হলে পুলিশ কতটা পদক্ষেপ করবে, অনেকেই তা নিয়ে সন্দিহান।
মগরায় পঞ্চাশটির বেশি পুজো হয়। মঙ্গলবার ঘুরে দেখা গেল মগরা স্টেশন রোড, কাঁটাপুকুর, জিটি রোডের ধারে বিভিন্ন জায়গায় মণ্ডপের সামনে মাইক বাঁধা। বিভিন্ন পুজো কমিটির কর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, জোরে গান বাজানো হবে না। মগরা-ত্রিবেণী রোডের নবোদয় সঙ্ঘের সভাপতি প্রণবকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের মণ্ডপে মাইক বাঁধা হয়েছে শুধুমাত্র জরুরি পরিষেবার কথা ঘোষণার জন্য। উচ্চ মাধ্যমিকের কারণে আমরা জোরে মাইক বাজাব না। পুজোর চার দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেও বাতিল করা হয়েছে।’’ একই কথা জানিয়ে কোলা বান্ধব সম্মিলনীর সম্পাদক রুদ্র দত্ত বলেন, ‘‘পুলিশ বলেছে, কোনও ভাবেই যেন জোরে মাইক বা ডিজে বাজানো না হয়। আমরা সরকারি নির্দেশ মেনেই পুজো করব।’’
অনেক জায়গাতেই অবশ্য আলোর তোরণে বাঁধা মাইকের বহর দেখে পরীক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবকেরা চিন্তায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মগরার জয়পুরের এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন পুজোর চার দিন শব্দ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আমার ছেলে পরীক্ষা নির্বিঘ্নে দিতে পারবে। না হলে মুশকিল। পুজো কমিটির লোকেরা সচেতন হবেন, এই প্রার্থনাই করছি।’’ শনিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে প্রতিমা নিরঞ্জন হবে জানান মগরা ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রঘুনাথ ভৌমিক।
এ দিকে, জোরে মাইক বক্স বাজানো বন্ধে উদ্যোগী হয়েছে পান্ডুয়া থানাও। বুধবার ওই থানায় ব্লকের সমস্ত মাইক ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ডিজে বা চড়া শব্দে মাইক বাজলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।