অ্যাডিনোভাইরাস কে অযথা ভয় নয়। — ফাইল চিত্র।
ঠান্ডার প্রকোপ কমেছে। বাতাসে বসন্তের ছোঁয়া। ঋতু বদলের এই সন্ধিক্ষণে হুগলিতে বিভিন্ন হাসপাতালে এবং চিকিৎসকের চেম্বারে বাড়ছে জ্বরের রোগীর ভিড়। সঙ্গে থাকছে সর্দি-কাশির উপসর্গ। বেশি কাবু হচ্ছে শিশুরা। চিকিৎসকেরা মনে করছেন, অনেক ক্ষেত্রেই এই সংক্রমণ অ্যাডিনোভাইরাসের। তবে, অন্যান্য ভাইরাসের হানাদারিও জ্বর-সর্দি ডেকে আনছে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অ্যাডিনোভাইরাস চিহ্নিত করার ব্যবস্থা জেলায় নেই। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হচ্ছে। হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমা ভুঁইয়া বলেন, ‘‘মরসুমের এই সময় এমনিতেই ভাইরাসঘটিত জ্বরের প্রকোপ বাড়ে। তবে, বাড়তি ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। দরকার সতর্ক থাকা এবং জটিলতা বাড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।’’ ওই স্বাস্থ্যকর্তার দাবি, ভাইরাসঘটিত জ্বর নিয়ে এই জেলায় শিশুদের ভর্তির সংখ্যা বেশি নয়। তবে, পরিকাঠামো তৈরি রাখা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, অ্যাডিনোভাইরাসের চিকিৎসা নিয়ে শনিবার স্বাস্থ্য ভবনের তরফে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। ওই দিনই হুগলিতে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জেলা, মহকুমা হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট এবং বিএমওএইচ-দের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। কী করতে হবে, তা নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশিকা ব্লক হাসপাতাল পর্যন্ত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শিশু-চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন স্বাস্থ্যকর্তারা। হাসপাতালে শিশুদের কেয়ার ইউনিটগুলিকে সতর্ক করে দেওয়া হয়।
এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘আমাদের জেলায় ভর্তির সংখ্যা বেশি নয়। তবে, প্রয়োজন তো হতেই পারে। তাই, প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। জটিলতা থাকায় কিছু শিশুকে কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। সেই সংখ্যাও অল্প।’’
চিকিৎসকদের একাংশ জানান, অ্যাডিনোভাইরাস সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণগুলি হল— তিন থেকে পাঁচ দিন ক্রমাগত বা ধুম জ্বর আসা, স্বাভাবিকের থেকে শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি দ্রুত হয়ে যাওয়া, এর সঙ্গে বুকের মাংসপেশি ভিতরে ঢুকে যাওয়া, নাকের পাটা ফুলে যাওয়া, শিশুর খাওয়া অর্ধেকের কম হয়ে যাওয়া, দিনে পাঁচ বারের কম প্রস্রাব, সারাক্ষণ ঝিমুনি বা বেহুঁশ ভাব, হঠাৎ খিঁচুনি, অজ্ঞান হওয়া ইত্যাদি। এ সব ক্ষেত্রে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জরুরি।
উত্তরপাড়ার বিশিষ্ট চিকিৎসক ঐশ্বর্যদীপ ঘোষ বলেন, ‘‘প্রতিদিনই প্রচুর জ্বরের রোগী পাচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রে হাসপাতালেও ভর্তি করতে হচ্ছে। আমি ইতিমধ্যেই অন্তত পাঁচ জনকে ভর্তি করিয়েছি। অ্যাডিনোভাইরাস সাত রকমের। কিন্তু রোগীদের পরীক্ষা করে নির্দিষ্ট চিকিৎসার পরিকাঠামো আমাদের কাছে নেই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘অ্যাডিনোভাইরাস থেকে নিউমোনিয়া, নিউরো সমস্যা-সহ অন্য রোগেরও প্রকোপ দেখা দিতে পারে। তাই সর্তক থাকা জরুরি। করোনার সময়ের মাস্ক পরা, হাত ধোওয়ার অভ্যাস ফের করতে হবে। অন্তত কিছু দিনের জন্য রোগীদের আলাদা রাখা ভাল।’’