চাওয়া পাওয়া ছবি বলাগড়। — নিজস্ব চিত্র।
কাঁচা রাস্তা কার্যত নেই। হাইমাস্টের চড়া আলো। কিন্তু, গত পাঁচ বছরে কতটা পথ এগোল বলাগড় ব্লক! উন্নয়নের আলো কতটা জোরাল হল?
হুগলির গঙ্গাপাড়ের শেষ ব্লকে অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প। দিল্লি থেকে ওই প্রকল্পের টাকা আসা বন্ধ নিয়ে বিজেপি-তৃণমূল পরস্পরের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। তবে, ভুগছে গ্রাম। সাফাইয়ের কাজে সমস্যা হচ্ছে। জলাশয় ভরাট হয়েছে, কিন্তু পুকুর খননের রাস্তা নেই।
এই ব্লক আর্সেনিকপ্রবণ। আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ, জলের প্রকল্প প্রায়ই বিকল হয়। বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সর্বত্র পৌঁছয়নি।
জিরাটে আহমেদপুর গ্রামীণ হাসপাতালে পরিষেবা আগের থেকে ভাল। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। কিন্তু, অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল টিমটিমে। ২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গুপ্তিপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১০ শয্যার নতুন অন্তর্বিভাগ উদ্বোধন করেন। প্রতিশ্রুতি ছিল, ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা মিলবে। বাস্তবে, অন্তর্বিভাগ উঠেই গিয়েছে। সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টো পর্যন্ত বহির্বিভাগটুকু চলে। বাকি ১৮ ঘণ্টায় কারও মাথা ফাটলেও পাশের পূর্ব বর্ধমানের কালনা হাসপাতাল ভরসা। রাত-বিরেতে প্রসব বেদনা উঠলে অন্তঃসত্ত্বার প্রাণান্তকর অবস্থা হয়। এখানথেকে কালনা ৭ কিলোমিটার। জিরাটের দূরত্ব দ্বিগুণের বেশি।চুঁচুড়ায় হুগলির জেলা সদর হাসপাতাল আরও দূরে। ‘দিদির দূত’কে সমস্যা জানিয়েও সুরাহা অধরা। অভিযোগ, বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বর রাতেনেশার আখড়া।
গুপ্তিপাড়ায় প্রচুর আনাজ উৎপন্ন হলেও বিপণন ব্যবস্থা তথৈবচ। বলাগড়ে কিসান মান্ডিতে উজিয়ে যান না এখানকার চাষি। গণ-পরিবহণ ব্যবস্থা লাটে। একাধিক রুটের বাস-ট্রেকার বন্ধ। বেশি টাকা খরচে অটো-টোটোর ভরসায় যাতায়াত চলে। জিরাট স্টেশন রোডে যানযন্ত্রণা নিত্যদিনের ভোগান্তি।
বিস্তীর্ণ এলাকায় গঙ্গাভাঙন বড় সমস্যা। ভাঙনে কিছু দিন আগে চর খয়রামারিতে স্কুলবাড়ি ভাঙনের কবলে পড়ে। আদালতের হস্তক্ষেপে অস্থায়ী জায়গায় স্কুল সরেছে।
পঞ্চায়েত সমিতির কর্তাদের দাবি, আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের ৪৬টি প্লান্ট বসেছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মাধ্যমে। গঙ্গার জল তুলে শোধন করে সরবরাহের প্রকল্পের কাজ চলছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহের কাজও শুরু হয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতি ৫০টির বেশি হাইমাস্ট লাগিয়েছে। এ বাদেও জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েতের আছে। ১১টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিকাঠামো উন্নতির কাজ চলছে। তবে, চিকিৎসকের ঘাটতির কথাতাঁরা মানছেন।
পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি পায়েল পালের দাবি, উন্নতি সব দিকেই হয়েছে। কেন্দ্র সাহায্য না করলে গঙ্গাভাঙনের সমস্যা পুরো মিটবে না। তাতেও, মিলনগড়, চর খয়রামারি, চর সৌন্দলপুর, চাঁদরায় গঙ্গাভাঙন রোধে অস্থায়ী ভাবে বাঁধ দেওয়ার কাজ করা হয়েছে।
পর্যটনের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের ‘সবুজ দ্বীপ’ চালু হয়েছে। চরকৃষ্ণবাটীতে ইকো-পার্ক হয়েছে। তবে, পর্যটন মানচিত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক জায়গার কথা ভাবা হয়নি বলে অভিযোগ। পরিবেশের উপরে ‘অত্যাচারের’ অভিযোগও রয়েছে নানা জায়গায়।
উন্নয়নের প্রসঙ্গে শাসক দলের ‘চুরি’ আর ‘দুর্নীতি’র প্রসঙ্গ উঠছে। নিয়োগ-দুর্নীতিতে জেলা পরিষদের বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় (তৃণমূলের বহিষ্কৃত নেতা) হাজতে। তৃণমূল নেতাদের একাংশের দাবি, ‘চুরি’, ‘দুর্নীতি’ নিয়ে বিরোধীদের ‘অপপ্রচারে’ মানুষ বিভ্রান্ত নন।
যদিও, বিজেপি নেতা স্বপন পালের কথায়, ‘‘বলাগড়ে মানুষের জন্য তৃণমূল কিচ্ছু করেনি। দুর্নীতি, গঙ্গা থেকে মাটি, বালি চুরি করে, কাটমানি নিয়ে ওদের কিছু নেতা ফুলেফেঁপে উঠেছেন। চাকরির নামে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, কুন্তল ঘোষেরা কত জনের থেকে টাকা লুটেছেন, সেই হিসাব মানুষ ওদের ভোটে বুঝিয়ে দেবেন।’’
বলাগড় ব্লকের সিপিএমের নির্বাচনী কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ হেমব্রমের মন্তব্য, ‘‘বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের নাম বদলে তৃণমূল নাম কিনতে চাইছে। উন্নয়ন হয়েছে শুধু তৃণমূল নেতাদের। চুরিতে বলাগড় তো আন্তর্জাতিক স্তরে নাম কিনে ফেলেছে তৃণমূলের জন্য।’’