গুলিতে জখম হওয়া যুবক দীপ মণ্ডলের । ছবি: তাপস ঘোষ
কাকভোরে গঙ্গার ঘাটে মদের আসরে গোলমাল। তার জেরে গুলিবিদ্ধ হলেন এক যুবক। কিন্তু না দমে পেটে গুলিবেঁধা অবস্থায় গঙ্গায় ঝাঁপ দিলেন। তারপর উঠে গঙ্গাপাড়ের ঝোপে লুকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। সেখান থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার হেঁটে মোটরবাইক জোগাড় করে সেটি চালিয়ে বাড়ি পৌঁছলেন। বাড়ির লোকেরা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করলেন।
শনিবার হুগলির চুঁচুড়ায় শ্যামবাবুর ঘাট এলাকায় ওই গুলি-কাণ্ডে জখম দীপ মণ্ডল প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে রক্তাক্ত অবস্থায় ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ টের পায়নি। পরে মূল অভিযুক্ত রাজা বিশ্বাস-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। রাজা এবং দীপ রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দা। তারা পড়শি এবং বন্ধু। পুলিশের দাবি, পুরনো বিবাদের জেরে এ দিন মদের আসরে রাজা ওই কাণ্ড ঘটায়।
চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘ধৃতদের জেরা করা হচ্ছে। আরও যারা ছিল, তাদের খোঁজ করা হচ্ছে।’’ বিকেলে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার রবীন্দ্রনগরে সভা করে দুষ্কৃতীদের কার্যত হুঁশিয়ারি দেন। বিধায়ক বলেন, ‘‘কোনও ধরনের অপরাধমূলক কার্যকলাপ চলবে না। যারা এই ধরনের কাজে যুক্ত থাকবে, তাদের রেয়াত করা যাবে না।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, কার্তিক পুজো উপলক্ষে শুক্রবার রাতে রবীন্দ্রনগরের বিশতারিখ এলাকায় পংক্তিভোজ হয়। খাওয়া শেষে ছিল মদের আসর। সেখানে দীপ,রাজা ছিল। ভোর ৪টে নাগাদ দীপ, রাজা-সহ জনা চারেক যুবক অভিজিৎ দাস ওরফে গুড্ডু নামে এক বন্ধুকে শ্যামবাবুর ঘাটের কাছে বাড়িতে পৌঁছে দিতে যায়। সেখানে গঙ্গাপাড়ে ফের মদ খায় তারা। পুলিশের দাবি, সেখানেই পুরনো বিবাদ নিয়ে রাজার সঙ্গে দীপের বচসা হয়। অভিযোগ, সঙ্গে থাকা ওয়ান শটার বের করে দীপকে গুলি করে রাজা। দীপ গঙ্গায় ঝাঁপান।
পুলিশের অনুমান, পাড়ে দাঁড়িয়ে রাজা হুমকি দিচ্ছিল গীপকে। তার হাত থেকে বাঁচতে রক্তাক্ত অবস্থাতেই দীপ সাঁতরে পাশের বোসের ঘাটে গিয়ে ওঠেন। সেখানে মিনিট পঁয়তাল্লিশ কাদার মধ্যে ঝোপে লুকিয়েছিল। জামা খুলে পেটের রক্ত মোছেন। সাড়ে পাঁচটা নাগাদ সেখান থেকে বেরিয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার হেঁটে তোলাফটকে যান। সেখান থেকে একটি মোটরবাইক জোগাড় করে বাড়ি গিয়ে ঘটনার কথা জানান।
গুলি চালানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত-সহ গ্রেফতার হওয়া দুই যুবক। ছবি: তাপস ঘোষ
দীপকে প্রথমে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে কলকাতার আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করানো হয়। তাঁর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে দুপুরে নসিবপুরে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পুলিশ রাজাকে ধরে। পরে গুড্ডুকেও ধরা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, রাজার বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় ডাকাতি, মোটরবাইক চুরির অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি সে জেল থেকে জামিনে ছাড়া পায়। এক সময়ে সে রবীন্দ্রনগরের কুখ্যাত দুষ্কৃতী টোটোন বিশ্বাসের সহযোগী ছিল। বনিবনা না হওয়ায় পরে টোটনের বিরোধী গোষ্ঠীতে ভেড়ে।
দীপের বাবা তারাপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘শুক্রবার রাতে ছেলে পংক্তিভোজে গিয়েছিল। কেন ওদের সঙ্গে ওখানে গেল, কে জানে!’’