কবে ফিরবে হাল, তারই অপেক্ষায় সেবাসদন হাসপাতাল। —নিজস্ব চিত্র।
ভোটের মুখে প্রায় দু’কোটি টাকার ‘জিওনকাঠি’ পেল রিষড়া সেবাসদন হাসপাতাল।
বৃহস্পতিবার রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের তরফে রিষড়া পুর-কর্তৃপক্ষকে পাঠানো এক নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সেবাসদন হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার জন্য ১ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর ফলে ধুঁকতে থাকা এই হাসপাতাল অক্সিজেন পাবে বলে অনেকে মনে করছেন।
পুরসভা সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন পড়ে থেকে হাসপাতালের অনেক সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বেশ কিছু যন্ত্র পুরনো হয়ে গিয়েছে। পুরনো কাঠের শয্যা বদলে আধুনিক শয্যা, এক্স-রে, আলট্রা-সোনোগ্রাফি প্রভৃতি যন্ত্র কেনার জন্য এক বছর আগে রাজ্যের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল। সেই আবেদনের ভিত্তিতেই চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার টাকা দিচ্ছে রাজ্য সরকার। ফলে, পুরসভাই হাসপাতাল চালাবে বলে পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
হাসপাতালটি চালাতে চেয়ে এর আগে প্রশাসনের কাছে দরখাস্ত জমা দেন পুর-কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসনের তরফে সেই আবেদন রাজ্যে পাঠানো হয়। পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান তথা বিদায়ী পুরপ্রধান বিজয়সাগর মিশ্র বলেন, ‘‘হাসপাতালটা ভাল করে চালানো এবং শহরবাসীকে সেরা পরিষেবা দেওয়াই আমাদের
লক্ষ্য। সরকারের পদক্ষেপ আন্তরিক এবং যথাযথ।’’ তিনি জানান, হাসপাতাল চালাতে পুরসভার তরফে সংশ্লিষ্ট দফতরে লাইসেন্সের আবেদন করা হবে।
এই হাসপাতালের পুনরুজ্জীবনের জন্য বেশ কিছু দিন ধরে কংগ্রেস এবং বামেরা জোট বেঁধে আন্দোলনে নামে। গণ-দরখাস্ত জমা দেয়। সম্প্রতি বিজেপি-ও অবস্থান বিক্ষোভ করে। গত কয়েক বছরে বিস্তর টালবাহানার পরেও যে প্রতিষ্ঠানকে বারে বারেই কার্যত শূন্য হাতে থাকতে হয়েছে, নির্বাচনের দোড়গোড়ায় এসে অর্থ বরাদ্দ হওয়ায় তাই বিরোধীরা ভোটের রাজনীতি দেখছেন। সরকারের ঘোষণায় তারা এখনই আশ্বস্ত হতে রাজি নয়।
সিপিএমের রিষড়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুদীপ সাহা বলেন, ‘‘সেবাসদন পূর্ণাঙ্গ ভাবে চালু হোক। মানুষ চিকিৎসা পান। আগেও একাধিক বার এ নিয়ে চমক দেখেছি আমরা। ভোটের আগে রং করা হয়েছে। ভোট মিটলে হাত গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে।’’ শহরের কংগ্রেস নেতা সাবির আলির বক্তব্য, ‘‘এটা স্থায়ী ব্যবস্থা কিনা, পরিষ্কার নয়। জনস্বার্থে সরকার হাসপাতাল অধিগ্রহণ করুক। আগেও প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকার পালন করেনি। তেমন নির্বাচনী চমক যেন না হয়।’’
রিষড়া স্টেশন থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে এই হাসপাতাল কয়েক দশকের পুরনো। শহরবাসী জানান, অপেক্ষাকৃত কম খরচে এখানে চিকিৎসা মিলত। রিষড়া শহর বা পঞ্চায়েত ছাড়াও আশপাশের এলাকা থেকে মানুষ আসতেন। বাম আমলে রাজ্য সরকার অনুদান দিত। ২০১১ সালে তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পরে গরমিলের অভিযোগ তুলে অনুদান বন্ধ করে দেয়। পরিচালন কমিটির সদস্যেরা পদত্যাগ করেন। অচলাবস্থা শুরু হয়। রাজ্য সরকারের তরফে তদারকি কমিটি গড়া হলেও সমস্যার সুরাহা হয়নি। হাসপাতালের হাল ফেরানোর দাবিতে কর্মীরা কম আন্দোলন করেননি।
কয়েক বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতালটি অধিগ্রহণের নির্দেশ দেন। পরে সরকার জানায়, অধিগ্রহণ সম্ভব নয়। শুধু বহির্বিভাগ চলবে। এই অবস্থাতেই ১১০ শয্যার এই হাসপাতাল কার্যত পড়ে রয়েছে।
এ বার সরকারি বরাদ্দে এই প্রতিষ্ঠান ভাল ভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারে কিনা, সেটাই দেখার।