আরপিএফের হাতে আটক হওয়া নিত্যযাত্রীরা। — নিজস্ব চিত্র।
বহু টাকা খরচ করে প্রিমিয়াম তৎকালের টিকিট কেটেছিলেন। ভেবেছিলেন, ট্রেনে আরাম করে যাবেন অযোধ্যায়। কিন্তু সে গুড়ে বালি! হাওড়া থেকে ট্রেনে ওঠার পরেই যাত্রীরা দেখেন, তাঁদের আসন দখল করে বসে অন্য কেউ। নিজেদের তাঁরা দাবি করেন ‘নিত্যযাত্রী’ বলে। উঠতে বললে শুরু হয় বচসা। যা গড়ায় জোর হাতাহাতিতে। অভিযোগ, নিত্যযাত্রীদের দৌরাত্ম্যে দৈনিক বিপাকে পড়ছেন সংরক্ষিত আসনের যাত্রীরা। টিটিই এবং আরপিএফ একে অপরের ঘাড়ে দায় ঠেলতে ব্যস্ত।
হাওড়া থেকে প্রিমিয়াম তৎকালে টিকিট কেটেছিলেন তনুজা গুহ (নাম পরিবর্তিত)। সঙ্গে অসুস্থ লোক রয়েছে। ভেবেছিলেন, হাত-পা ছড়িয়ে আরাম করে পৌঁছে যাবেন অযোধ্যা। কিন্তু হাওড়া ছাড়ার পরেই তাঁদের এস-১০ কামরার নির্দিষ্ট আসনে এসে বসে পড়েন অন্য কয়েক জন। তাঁরা কারা? জবাব আসে, ‘‘আমরা নিত্যযাত্রী।’’ তনুজার অভিযোগ, তথাকথিত নিত্যযাত্রীদের বসার জায়গা করে দিতে তাঁদেরই কোনও রকমে চেপেচুপে বসতে হয়। ট্রেনের গতি যত বাড়ে, ততই দাবিদাওয়া বাড়তে থাকে নিত্যযাত্রীদের। বাড়াবাড়ির উপক্রম হলে আপত্তি করেন তনুজারা। অভিযোগ, তার পরেই আসল রূপ বেরিয়ে পড়ে নিত্যযাত্রীদের। তনুজার সঙ্গী তাঁদের জায়গা খালি করে দিতে বললে তাঁকে মারধর করতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। সেই সঙ্গে চলতে থাকে সংরক্ষিত টিকিট কেটে ট্রেনে ওঠা যাত্রীদের উদ্দেশে ‘নিত্যযাত্রী’দের অকথ্য ভাষায় গালাগালি। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে চেন টেনে ট্রেন থামাতে বাধ্য হন তনুজা।
অভিযোগ, প্রতি দিনই দুন এক্সপ্রেস-সহ একাধিক ট্রেনের সংরক্ষিত কামরায় শ্রীরামপুর, চন্দননগর, ব্যান্ডেল যাতায়াত করেন বহু মানুষ। যাঁরা নিজেদের পরিচয় দেন নিত্যযাত্রী হিসাবে। কিন্তু নিত্যযাত্রীদের এক্সপ্রেস বা মেল ট্রেনের সংরক্ষিত কামরায় উঠতে দেয় কে? খানাতল্লাশি করতে বেরিয়ে টিটিইর খোঁজ পাননি তনুজারা। শেষ পর্যন্ত কর্তব্যরত আরপিএফ কর্মীরা এসে তনুজাদের কামরা থেকে চার নিত্যযাত্রীকে আটক করেন। আরপিএফ কর্মীর দাবি, সংরক্ষিত কামরায় বেআইনি যাত্রী উঠছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব নাকি টিটিইর। তাঁদের কাজ নিরাপত্তার দিকটি দেখা। অথচ, সংরক্ষিত কামরায় নিত্যযাত্রীরা কী করে উঠছেন, এতে কি যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে না? তার উত্তর দিতে পারেননি আরপিএফ কর্মী।
জানা গিয়েছে, আটক হওয়া চার জনেরই বাড়ি হুগলির জিরাট এলাকায়। তাঁরা প্রতি দিনই হাওড়়া থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক্সপ্রেস ট্রেনের সংরক্ষিত কামরায় জোরজবরদস্তি এ ভাবে সফর করেন। অভিযোগ, টিটিই বা আরপিএফ— কেউই তাঁদের কিছু বলে না। সংরক্ষিত কামরার যাত্রীদের প্রশ্ন, রেলকর্মীদের একাংশের মদতে নিত্যযাত্রীদের এই জুলুম বন্ধ হবে কবে?