গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাট। নিজস্ব চিত্র
সড়কের ভার কমাতে জলপথ পরিবহণে জোর দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। এ জন্য বিভিন্ন রাজ্য জুড়ে বেশ কিছু ফেরিঘাটে পরিকাঠামো গড় তুলতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রের বন্দর, জাহাজ ও জলপথ মন্ত্রকের অধীন আন্তর্দেশীয় জলপথ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ় অথরিটি অব ইন্ডিয়া বা আইডব্লুএআই)। আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। হুগলি জেলাতেও একাধিক ফেরিঘাট ঢেলে সাজা হবে এই প্রকল্পে।
এখানে জলপথ পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি নিয়ে বৃহস্পতিবার আইডব্লুএআই পরিকল্পনা (স্ট্র্যাটেজিক) বৈঠক করল হুগলি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে। জেলাশাসকের কার্যালয়ে বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক মুক্তা আর্য, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অমিতেন্দু পাল-সহ প্রশাসনের অন্য আধিকারিকরা। জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা দেবাশিস রায়, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ বিজন বেসরা প্রমুখও ছিলেন। সার্বিক পরিকল্পনা বৈঠকে বুঝিয়ে বলেন আইডব্লুএআই-এর আধিকারিকেরা। প্রকল্পের কাজে সহযোগিতার ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের তরফে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে বলে আইডব্লুএআই সূত্রে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরাও একই কথা জানান।
প্রশাসন ও আইডব্লুএআই সূত্রে জানা গিয়েছে, বলাগড় ব্লকের গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাট, চুঁচুড়া-মগরা ব্লকের চন্দ্রহাটি ২ পঞ্চায়েতের শর্মাবাবু ফেরিঘাট এবং বাঁশবেড়িয়া পুরসভার সপ্তর্ষি ফেরিঘাটকে এ জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের ‘জল মার্গ বিকাশ’ নামে ওই প্রকল্পে যাত্রী স্বাচ্ছ্যন্দ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে সংশ্লিষ্ট ফেরিঘাটে আধুনিক জেটি তৈরি করা হবে। শৌচাগার কমপ্লেক্স, বিশ্রামাগার-সহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকবে। সৌরশক্তিতে আলো লাগানো হবে। এ রাজ্যের আরও কিছু ফেরিঘাটকে এই প্রকল্পের আওতায় সাজানো হবে। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ— এই চার রাজ্যে ওই প্রকল্পের কাজ হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, গুপ্তিপাড়া এবং শর্মাবাবু ফেরিঘাটে কাজের ছাড়পত্র ‘এনওসি’ (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য ফেরিঘাটটির ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। তা কাটানোর চেষ্টা চলছে। ওই দফতরের তরফে সমীক্ষাও হয়ে গিয়েছে। পরিকাঠামো তৈরির পক্ষে ওই জায়গা উপযুক্ত মনে হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক মনে করেন, জলপথে পরিবহণের সুযোগ-সুবিধা বাড়লে যাত্রিসংখ্যাও বাড়বে। সড়কের চাপ কমাতে এই ব্যবস্থা কার্যকর হবে। যানজটও কমবে। সে দিকে লক্ষ্য রেখে পরিকাঠামো তৈরি করাই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। আইডব্লুএআই সূত্রের দাবি, ওই প্রকল্প হলে সংশ্লিষ্ট জায়গায় গঙ্গার দুই পাড়ের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এর আগে ওই তিন জায়গায় এলাকাভিত্তিক বৈঠক করা হয়েছে স্থানীয়দের নিয়ে। প্রকল্পটি হলে তাঁদের কী কী সুবিধা হবে, সে ব্যাপারে বোঝানো হয়েছে।
জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ বিজন বেসরা জানান, সংশ্লিষ্ট ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলে তাঁদের তরফে যা করণীয় করা হবে। গুপ্তিপাড়া ১ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান তথা বর্তমান সদস্য বিশ্বজিৎ নাগ বলেন, ‘‘বেশ কিছু দিন আগেই আমাদের পঞ্চায়েতের তরফে এনওসি ব্লক প্রশাসনকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ব্লক থেকে তা জেলা প্রশাসনের কাছে চলে গিয়েছে বলে জেনেছি।’’