প্রয়োজনীয় ঋণ মিলছে না বলে অভিযোগ
Agriculture Cooperatives Arambagh

কৃষি সমবায়ে ভরসা হারাচ্ছেন বহু চাষি

সমবায় দফতরেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষি সমবায়গুলিতে ঋণ-খেলাপির সংখ্যা বাড়ছে। সেখানে নতুন করে সদস্য হতেও কেউ বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:২১
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বছর ছয়েক আগে পর্যন্ত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে চাষ নষ্ট হলে হুগলি জেলায় চাষিদের বড় ভরসা ছিল সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতিগুলি। সহজে ঋণ, সার ও বীজ মিলত। কিন্তু এখন বেশির ভাগ চাষিই সমিতি থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন। কারণ, না মিলছে প্রয়োজন মতো ঋণ, না অন্য সুবিধা— এমনটাই অভিযোগ তাঁদের।

Advertisement

নিম্নচাপের বৃষ্টির পর আট দিন পার। হুগলির জেলায় আলু, ধান ও আনাজ চাষে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দিতে পারেনি কৃষি দফতর। ক্ষতিপূরণের দাবিতে চাষিদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাড়ছে। কিন্তু কেউই সে ভাবে সমিতিতে যাচ্ছেন না। সরকারি উদাসীনতার কারণেই সমিতিগুলি বেহাল হয়ে পড়ছে বলে তাঁদের অভিযোগ। একই অভিযোগ রয়েছে বিরোধীদেরও।

সমবায় দফতরেরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষি সমবায়গুলিতে ঋণ-খেলাপির সংখ্যা বাড়ছে। সেখানে নতুন করে সদস্য হতেও কেউ বিশেষ আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এমনকি, ঋণ-খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায় করে তাঁদের ফের সমবায়মুখী করারও কোনও উদ্যোগ নেই। ফলে, সমবায়ের ভাঁড়ারে টান পড়ছে।

Advertisement

কেন এই পরিস্থিতি?

চাষিদের একাংশের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরে সমিতিগুলিতে নির্বাচন হচ্ছে না। নির্বাচিত বোর্ড না-থাকায় চাষিদের ঋণদান ব্যাহত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে হয়রানও হতে হচ্ছে। সমিতির নথিভুক্ত চাষিদের মধ্যে সামান্য অংশ ঋণ পাচ্ছেন। যা তাঁদের প্রয়োজনের তুলনায় কম। জেলার অনেক সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির ম্যানেজাররাও এর সঙ্গে স্বীকার করেছেন, চাষিদের খেলাপি ঋণ ক্রমাগত বাড়ছে। তা আদায়ের আইন থাকলেও সরকারি কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নেই। প্রশাসক হিসাবে ম্যানেজাররা দায়িত্ব পেলেও নির্বাচিত বোর্ড না থাকায় ঋণ আদায়ের ঝুঁকি নেওয়া যায় না। সর্বোপরি, জেলা জুড়ে সরকারি আধিকারিকদের অপ্রতুলতায় সমবায়গুলিতে তেমন নজরদারিও হচ্ছে না।

জেলা সমবায় দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দফতরের লোকবল প্রয়োজনের তুলনায় কম। ব্লক স্তরে মাত্র একজন করে অফিসার তথা পরিদর্শক আছেন। এক-একটি ব্লকে নানা ধরনের মিলিয়ে ৩০-৪০টি করে সমবায় আছে। ব্লকের অফিসারদের সমবায় ক্ষেত্র ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসানের বহু দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। ফলে, তাঁরা সমবায়গুলিতে যথাযথ নজরদারি করতে পারছেন না।

হুগলি জেলা নিবন্ধক অভিজিৎ সরকার অবশ্য দাবি করেছেন, সমবায়গুলিকে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, “নির্বাচিত বোর্ড না থাকলেও সমবায়গুলিতে প্রশাসক এবং বিশেষ অফিসার নিয়োগ করা আছে। ঋণ আদায়েরও চেষ্টা চলে।”

সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ভাস্কর রায়ের অভিযোগ, “রাজ্য সরকার সমবায়গুলির ব্যাপারে ভীষণ ভাবে উদাসীন। নতুন সদস্য হচ্ছে না। অসহায় চাষিদের মহাজনের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে।” একই অভিযোগ তুলে বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তথা পুরশুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষ বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে শুভেন্দুদা (অধিকারী) আন্দোলন কর্মসূচি নিয়েছেন। আমরা আন্দোলন শুরু করেছি।”

তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের কৃষি-সেচ ও স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ মদনমোহন কোলের দাবি, “সমবায়গুলিকে চাঙ্গা করতে ইতিমধ্যে খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দেওয়া হয়েছে। সব সমবায়কে কমম্পিটারাইজড করা হচ্ছে। প্রায় ৮৫ শতাংশ সমবায়ে সেই কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। নতুন বোর্ড গঠনে নির্বাচন নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে।”

কিন্তু পরিসংখ্যান যা মিলছে, তাতে ওই চেষ্টা কতটা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। খানাকুল ২ ব্লকের চিংড়া সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির অনাদায়ী ঋণ প্রায় ৩ কোটি টাকা। এ নিয়ে সম্প্রতি এলাকায় বিক্ষোভ দেখান চাষিদের একাংশ। আরামবাগের পাড়াবাগনান সমবায় সমিতির ২০১৯-’২০ অর্থবর্ষ থেকে প্রায় ৬০০ চাষি ঋণ পরিশোধ করেননি। তাঁরা এখন সেখান থেকে ঋণ না পেয়ে মহজানের খপ্পরে পড়ে নাজেহাল হচ্ছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement