বস্তাবন্দি করা হচ্ছে আম। নিজস্ব চিত্র
জোগান অতিরিক্ত হলে দাম তুলনামূলক ভাবে কমে। অর্থনীতির এই সহজ কথা মাথায় রেখে ভরা গাছ থেকে কাঁচা আম পেড়ে বেচে দিয়েছিলেন অনেকে। আচার, জেলি তৈরির কারখানায় ভাল দাম পেয়েছে সেই আম। কিন্তু, যাঁরা অপেক্ষা করেছেন, পাকা টুসটুসে আম বেচে থলে ভরবেন, অতিফলনে তাঁরা কার্যত লোকসানে। হুগলি জেলার আমচাষিদের অভিজ্ঞতা এমনই।
অভাবী বিক্রিতে বাধ্য হওয়া চাষিরা পরিস্থিতির জন্য বিপণন ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাকে দুষছেন। তাঁদের বক্তব্য, বিপণনের পরিসর বাড়লে বেশি আম ফলিয়েও লাভের মুখ দেখতে পারতেন তাঁরা। বাজার ব্যবস্থার বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী বেচারাম মান্না।
জেলা উদ্যানপালন দফতরের বক্তব্য, এ বার প্রকৃতি আম চাষের সহায়ক ছিল। গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। শিলাবৃষ্টি বা অন্য কোনও সমস্যা না হওয়ায় মুকুল ঝরে যায়নি সে ভাবে। তাতে অনেক আমচাষি বুঝে যান, ঝেঁপে ফলন হবে। কিন্তু, দাম পড়ে যাবে। পরিস্থিতি আন্দাজ করেই তাঁরা কাঁচা আম পেড়ে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন।
পোলবার চাষি রজত নিয়োগী কাঁচা আম কারবারিদের ধ্যে একজন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এলাকা থেকে দুই মেদিনীপুর এবং হলদিয়ায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি আচার, জেলি তৈরির জন্য কাঁচা আম নিয়েছে। একই কারণে অসম, বিহার, ওড়িশার মতো ভিন্ রাজ্যেও প্রচুর কাঁচা আম গিয়েছে। ভালই দাম মিলেছে।’’ বলাগড় ব্লকের গুপ্তিপাড়া, জিরাট, কুন্তীঘাটের মতো জায়গাতেও কমবেশি একই চিত্র।
পোলবা-দাদপুর, চুঁচুড়া-মগরা, বলাগড় এবং পান্ডুয়া ব্লকে আম চাষ লাফিয়ে বেড়েছে। এখানকার আম রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি ভিন্ রাজ্যেও যায়। এই জেলার হিমসাগর প্রজাতির আমের জুড়ি মেলা ভার। মুম্বই, চ্যাটার্জি, ফজলিও হচ্ছে। গতবার দিল্লিতে পোলবার ‘হিমসাগর’ পুরস্কার জিতেছে। কিন্তু, পাকা আমের অপেক্ষায় থাকা চাষিদের এ বার মাথায় হাত। পোলবা ব্লকের প্রবীণ আমচাষি লক্ষ্মী শূর বলেন, ‘‘ব্যান্ডেল স্টেশন বাজারে রাত ১টা থেকে আমের বাজার বসে। দিল্লি রোড, জিটি রোড নাগালে। কিন্তু, অপরিসর জায়গায় বেশি ট্রাক দাঁড় করিয়ে আম বোঝাইয়ের উপায় নেই।’’ চাষিদের খেদ, এর সঙ্গে ফড়ের উৎপাত লেগেই রয়েছে। ভাল মানের আম এখন ১০-১৫ টাকা কিলো বিক্রি করছেন চাষি। বাজারে তা ৩০-৪০ টাকায় বিকোচ্ছে।
বলাগড়, গুপ্তিপাড়া, জিরাট থেকে দৈনিক ৪০-৫০ ট্রাক আম যাচ্ছে ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, অসমে। চাষিদের অনেকের দাবি, বাগান ইজারা নিয়ে, এমনকি নিজের বাগানে চাষেও সুবিধে হচ্ছে না। বিঘাপ্রতি ফলনে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ। সঙ্গে প্যাকিং, পরিবহণ খরচ। গুপ্তিপাড়ার শেখ মহিজুর, সমীর ভড়দের হাজার দুয়েক গাছ ইজারা রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘চাহিদা থাকলেও অতিফলন আর বিপণনের সমস্যা ডোবাচ্ছে।’’
গুপ্তিপাড়ায় সুব্রত মণ্ডলের বাগান রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এই ব্লকে ধান, আলু ছেড়ে অর্থকরী ফসল হিসাবে আম ফলাচ্ছেন অনেক চাষি। আম বহু ভাবে ব্যবহারের বিরাট সম্ভাবনা আছে। সরকারি উদ্যোগ জরুরি।’’