‘শহিদ’ অসীম দাসের ছবির সামনে ভাই শিবু। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যে অনেক আগেই কংগ্রেস-সিপিএম ‘পাশাপাশি’ এসেছে। দেশে বিজেপি-বিরোধী মহাজোটে বর্তমানে ‘কাছাকাছি’ এসেছে তৃণমূল, সিপিএম ও কংগ্রেসও। এই আবহে আজ, শুক্রবার আরও এক একুশে জুলাইয়ের ‘শহিদ সমাবেশ’ তৃণমূলের। রাজ্যে তৃণমূল সিপিএমের হাত ধরলে তাঁদের ভাবতে হবে বলে জানিয়ে দিলেন হুগলির সে দিনের এক শহিদের পরিবার। সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই চলবেই।
তিন দশক আগে, ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই যুব কংগ্রেসের ডাকে ‘মহাকরণ অভিযানে’ পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৩ জন। নিহতদের দলে ছিলেন হুগলির সাহাগঞ্জের ঝাঁপপুকুরের বাসিন্দা অসীম দাসও। তখন রাজ্যের ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে অন্যান্য ‘শহিদ’ পরিবারের মতো অসীমের বোনও সরকারি চাকরি পেয়েছেন। ভাই শিবু তৃণমূলের স্থানীয় নেতা। গত পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রতীকে দাঁড়িয়েছিলে। তবে হেরে যান। বৃহস্পতিবার দুপুরে শিবু বাড়ির কাছেই তৃণমূল কার্যালয়ে বসেছিলেন। কার্যালয়ের দেওয়ালে একদিকে টাঙানো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। অন্য দিকে অসীমের। বিজেপি-বিরোধী জোটে সিপিএমের সঙ্গে এক সারিতে তৃণমূলের থাকা নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় স্তর নিয়ে কিছু বলার নেই। কিন্তু এ রাজ্যে সিপিএমের বিরোধিতা করবই।’’
কথার মাঝে সে দিনে ফিরে যান শিবু। বলেন, ‘‘আমিও দাদার সঙ্গে গিয়েছিলাম মহাকরণ অভিযানে। পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে দাদা মারা যাবে, ভাবতে পারিনি। তার পরেও সিপিএমকে রাজ্যের গদি থেকে উৎখাতের জন্য লড়াই চালিয়ে গিয়েছি। তা সম্ভবও হয়েছে। প্রত্যেক বছরই শহিদ দিবসে দল আমাদের পরিবারকে আমন্ত্রণ জানায়। আমরা যাই। এ বারেও যাব।’’
কিন্তু এ বার দেশে তো সিপিএম-তৃণমূল আলাদা সমীকরণ! শিবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এমন দিন আসবে, ভাবিনি। কিন্তু বিজেপিকে হটাতে জাতীয় স্তরে যা-ই হোক না কেন, রাজ্যে সিপিএমের উল্টো পথেই হাঁটব। তবে, এ রাজ্যে আমাদের দল যদি সিপিএমের সাথে চলে, তা হলে আমাদের সত্যিই ভাবতে হবে!’’
স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘জোটের সঙ্গে শহিদ দিবসের কোনও সম্পর্ক নেই। কেন্দ্রে সিপিএমের সাথে জোট হলেও ২১ জুলাই আমাদের শহিদ দিবস থাকবেই। সে দিন যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের সকলের জন্য দলের শ্রদ্ধা অটুট থাকবে!’’
তৃণমূলের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে সমালোচনা করতে ছাড়েনি বিজেপি। হুগলি সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সভাপতি তুষার মজুমদার বলেন, ‘‘অসীম দাসদের মৃত্যু যাদের হাতে, সেই সিপিএমের সাথে জোট হলে ওই পরিবারগুলিকেই সামাজিক ভাবে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। তাই তাঁদের অন্য পথ খোঁজাই স্বাভাবিক।’’