দাপট: মাইক বাজিয়ে চলছে নাচ। সেচপুর গ্রামে। ছবি: সুশান্ত সরকার
পুলিশ সফল। আবার ব্যর্থও!
সফল, কারণ, ডিজে বাজেনি। ব্যর্থ, কারণ, থরে থরে মাইক একসঙ্গে বেজেছে। সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়েছেন। পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি বলে অভিযোগ। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দিনভর বলাগড়ের ইনছুড়ায় শব্দের তাণ্ডব চলেছে মনসা পুজোর মেলায়।
ইনছুড়ার ঝাপানতলায় এই উৎসব বিষহরি মেলা নামে পরিচিত। মঙ্গলবার পুজো উপলক্ষ্যে বহু মানুষ এখানে আসেন। অভিযোগ, উৎসব উপলক্ষে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামে শব্দের দাপাদাপি শুরু হয়। মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, কাতারে কাতারে মানুষ পুজো দেখতে এসেছেন। পাঁঠাবলি চলছে। ভিড়ে পা ফেলার উপায় নেই। মাইকে ঘোষণা চলছে। এখানে শব্দের উৎপাত না থাকলেও গ্রামের ভিতরে যেতেই অন্য অভিজ্ঞতা হল। সেখানে ২৫-৩০টি মাইক এক সঙ্গে ভ্যানে বা অন্য কোথাও বেঁধে তারস্বরে গান চলছে। তাল মিলিয়ে চলছে উদ্দাম নাচ। প্রচণ্ড আওয়াজে কান ঝালাপালা হওয়ার উপক্রম। চেঁচিয়ে বললেও পাশের লোকের কথা শোনা দায়।
সেচপুকুর, চাঁদপুর, কানপাড়া, রাজারপুর, গঙ্গাধারপুর প্রভৃতি গ্রামে এ ভাবে মাইক বেজেছে বলে অভিযোগ। মদের ফোয়ারা ছুটেছে। চাঁদপুর গ্রামের এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, ‘‘ভোরে হঠাৎ একসঙ্গে অনেকগুলোমাইকের বিকট শব্দে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তখন থেকেই মাইকের দাপাদাপি আর উদ্দাম নাচানাচি চলছে। কালও (বুধবার) চলবে। পুলিশ আছে মেলার জায়গায়। গ্রামেরভিতরে মাইক বাজাতে বন্ধ করতে বলার কেউ নেই।’’
গ্রামবাসীদের অনেকের অভিযোগ, আগে ডিজে বাজানো হত। এ বার ডিজে না বাজলেও রক্ষা মেলেনি। নাগাড়ে মাইকের সমবেত তাণ্ডবে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। বয়স্করা নাজেহাল হচ্ছেন। ‘শব্দসন্ত্রাস’ বন্ধে হুগলির ডিজে ও বাজিবিরোধী মঞ্চের তরফে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো হলেও কাজ হয়নি। হুগলি জেলা গ্রামীণ পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বহু কষ্টে ডিজে বক্স বাজানো বন্ধ করা হয়েছে। তবে গ্রামের ভিতরে কয়েকটি জায়গায় জোরে মাইক বাজছে। সেগুলিকেও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, পুজোর আগে সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে বৈঠককরে বলে দেওয়া হয়েছিল, যেনডিজে বাজানো না হয়। ডিজে না বাজলেও মাইকের দাপটে গ্রামবাসীদের সমস্যার কথা পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ মানছে। এ দিন ভিড় নিয়ন্ত্রণ নিরাপত্তায় ডিএসপি (ক্রাইম) দেবীদয়াল কুণ্ডুর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল। সিআই (মগরা) অরূপভৌমিক, সিআই (ধনেখালি) দেবাঞ্জন ভট্টাচার্য বাদেও বলাগড়, মগরা, পান্ডুয়া, পোলবা থানার ওসি-রা ছিলেন। মেলা চত্বরে কড়া নজর থাকলেও গ্রামের ভিতরে শব্দের তাণ্ডব নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা পুলিশ করেনি বলে অভিযোগ।
ইনছুরা বিষহরি মেলা উন্নয়ন সমিতির সভাপতি নিমাইচন্দ্র দাস জানান, ১৯২৮ সাল থেকে এখানে মনসা পুজো হয়। এলাকার ২৪টি গ্রামের মানুষ যোগ দেন। হুগলি বাদেও বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ এখানে পুজো দিতে আসেন। এ বার সাড়ে ৫ হাজারের বেশি পাঁঠাবলি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘মেলার আগে আমরা পুলিশ-প্রশাসন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে বৈঠক করেছিলাম। বৈঠকে ডিজে বাজাতে নিষেধ করে দেওয়া হয়। ডিজে বক্স কোথাও বাজেনি। তবে, গ্রামের দিকে কিছু জায়গায় বেশি সংখ্যক মাইক বেজেছে। তা-ও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।’’
বিকট আওয়াজে গান অবশ্য থামেনি।