সিঙ্গুরের একটি হিমঘরে মজুত আলু। ফাইল চিত্র।
করোনার বিধিনিষেধ এবং চাহিদা কমে যাওয়া— জোড়া ধাক্কায় রাজ্যের হিমঘরগুলিতে আলু জমছে। প্রমাদ গুনছেন চাষি, ব্যবসায়ী এবং হিমঘর-মালিকেরা। পরিস্থিতি থেকে নিস্তার পেতে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রীর কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন।
রাজ্যের হিমঘরগুলিতে এখন অন্তত ৫৫ লক্ষ টন আলু মজুত রয়েছে। হিমঘর-মালিক পতিতপাবন দে বলেন, ‘‘আলুর বাজার খারাপ হওয়ায় হিমঘর থেকে একেবারেই আলু বের হচ্ছে না। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে নভেম্বর মাসের মধ্যে হিমঘর ফাঁকা হবে না বলেই মনে হচ্ছে। তখন আমরা হিমঘরের ভাড়াও পাব না। উল্টে হিমঘর ফাঁকা করতে মজুরের খরচ গুনতে হবে।’’
কেন এই অবস্থা?
ব্যবসায়ীরা জানান, এ রাজ্যের আলু ব্যবসার অনেকটাই নির্ভর করে ভিন্ রাজ্যে (মূলত উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা এবং বিহারে) কতটা পাঠানো যাচ্ছে, তার উপরে। গত মে মাস থেকেই এ রাজ্যে আলুর বাজার নিম্নমুখী। করোনার জেরে রাজ্য সরকারের তরফে গাড়ি চলাচলে কিছু বিধিনিষেধ আছে। তা ছাড়া, মূলত যে তিন রাজ্যে আলু যায়, সেখানেও ট্রাক ঢোকার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তা ছাড়া, ওই রাজ্যগুলিতেও গত মরসুমে (গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল) ভাল ফলন হয়েছে। ফলে, সেখানে চাহিদা কমেছে। আগে যেখানে মাসে ২ লক্ষ টন আলু পাঠানো হচ্ছিল, সেখানে এখন সেই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮০-৮৫ হাজার টনে।
এ রাজ্যেও আলু কম বিক্রি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ হিসেবে তাঁরা জানান, দোকান-বাজারের সময়সীমা বাঁধা রয়েছে। ফলে, কেনাকাটা কমেছে। তা ছাড়া, লোকাল ট্রেন বন্ধ। বিক্রেতাদের গাড়িভাড়া করে আলু নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই লাগাম টানছেন। কারণ, তাতে আলুর দাম অনেক বেড়ে যেতে পারে।
আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখন বস্তাপিছু আলু বিক্রিতে ২৫০ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। আমরা কৃষি বিপণনমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি, যাতে রাজ্যের স্কুলগুলিতে গত বারের মতো দু’কেজি করে আলু মিড-ডে মিলে দেওয়া হয়। ভিন্ রাজ্যে আলু পরিবহণের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার ব্যবসায়ীদের কিছু সুবিধা দিক। সে ক্ষেত্রে আলুর বাজার কিছুটা হলেও চাঙ্গা হতে পারে।’’
সরকারের তরফে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলছেন চাষিরাও। তারকেশ্বরের রামনগরের চাষি গোবিন্দ ঘোষ গত মরসুমে ১৬ বিঘে জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আলুবীজের চড়া দামের জন্য গতবার প্রতি বিঘেতে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে আলু চাষ করেছি। এখন ২০০-২৫০ টাকা আলুর বস্তার দাম। ওই টাকায় হিমঘরে আলু রাখার খরচ পর্যন্ত উঠবে না। সরকার কিছু করুক।’’