বালি পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
প্রায় ছ’বছর ধরে নেই কোনও পুরবোর্ড। কার্যত খুঁড়িয়ে চলছে নাগরিক পরিষেবা। ‘কবে হবে পুরসভার ভোট?’ বাসিন্দাদের প্রশ্নের সদুত্তর নেই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছেও। বরং বাসিন্দাদের ‘ক্ষোভ’ প্রশমিত করতে তাঁদের বিভিন্ন যুক্তি দিতে হচ্ছে। লোকসভা ভোটের পরেই রাজ্যের কয়েকটি বিধানসভায় উপনির্বাচন ঘোষণা হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ‘‘আদৌ কি বালির পুরভোট হবে?’’
২০১৬ সালে বালির ৩৫টি ওয়ার্ডকে হাওড়া পুরসভায় যুক্ত করা হয়। তাতে হাওড়ার মোট ওয়ার্ড হয় ৬৬টি। বালি পুরসভার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে বালি বিধানসভার গোটা এলাকাই হাওড়া পুরসভায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তখন বালির ওয়ার্ড কমে দাঁড়ায় ১৬টি। কিন্তু ২০১৮
সালের ডিসেম্বরে হাওড়া পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হলেও নির্বাচন হয়নি। বদলে পুর প্রশাসকমণ্ডলী তৈরি হয়। এ দিকে নাগরিক পরিষেবার সমস্যার অভিযোগ তুলে বালির বাসিন্দাদের বড় অংশ পুনরায় পৃথক পুরসভা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তোলেন। এই টালবাহানায় কেটে যায় প্রায় তিন বছর। ২০২১ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের ঘোষণা করেন, হাওড়ার থেকে বালি আলাদা করা হল। অর্থাৎ, পুনরায় বালি পুরসভা তার ৩৫টি ওয়ার্ড নিয়েই চলবে।
বিধানসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় বাসিন্দারা আশার আলো দেখলেও, হাওড়া ও বালি পৃথক করা নিয়ে তৈরি হয় প্রশাসনিক জটিলতা। আজও সেই জটিলতা কতটা মিটেছে, তা স্পষ্ট নয় বাসিন্দাদের কাছে। তাঁদের কথায়, ‘‘২০২২ সালে রাজ্যের অন্যান্য পুরসভার সঙ্গেই বালির ভোটও হবে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু হয়নি। তার পর থেকে পুরোটাই বিশ বাঁও জলে!’’ মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকে মহকুমা শাসককে (সদর) বালির পুর প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে। তবে, অন্যান্য প্রশাসনিক কাজে তিনি ব্যস্ত থাকায় কার্যনির্বাহী আধিকারিককেই পুর পরিষেবা সংক্রান্ত সব কাজ দেখাশোনা করতে হয়। পুরকর্মীদের একাংশ বলছেন, ‘‘কার্যনির্বাহী আধিকারিক যতটা সম্ভব কাজের চেষ্টা করছেন। কিন্তু পুরপ্রতিনিধি বা পুরবোর্ড না থাকায় বিভিন্ন স্তরে সমস্যা হচ্ছে।’’
বিধানসভা, পুরসভা, পঞ্চায়েত এবং সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচন হয়ে গেল। গত কয়েক বছরে একের পর এক ভোট দেখল বালি। অথচ নিজস্ব পুরবোর্ড গঠনের নির্বাচন থেকে বঞ্চিতই থেকে গেল প্রাচীন জনপদ বালি। পুর আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, কর্মীরা অবসর নেওয়ার পরে পদ ফাঁকা পড়ে থাকছে। কিন্তু পুরবোর্ড না থাকার ফলে সেখানে নতুন করে স্থায়ী বা চুক্তিভিত্তিক কর্মীও নিয়োগ হচ্ছে না। আবার পুরপ্রতিনিধিরা যে সমস্ত শংসাপত্র দিতে পারতেন, তা পেতে এখন একমাত্র ভরসা বিধায়ক। পুরপ্রধানের অভাবে মিউটেশন ফি, কর-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছাড়ের বিষয়েও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। আবার, পুরপ্রতিনিধি না থাকায় গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না কোনও স্ট্যান্ডিং কমিটিও। ফলে যে কোনও পরিষেবার ক্ষেত্রে পুঙ্খানুপুঙ্খ নজরদারিও করা যাচ্ছে না। গঠন করা যাচ্ছে না প্রতিটি অঞ্চলের নীচের স্তরে দেখাশোনার জন্য ওয়ার্ড কমিটিও। সব মিলিয়ে জঞ্জাল অপসারণ, পানীয় জল, রাস্তাঘাট-সহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত বালি।
লোকসভা ভোটের প্রচারে বালিতে এসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, হাওড়া লোকসভার দায়িত্বও তিনি নিচ্ছেন। সেই প্রেক্ষিতে বাসিন্দাদের প্রশ্ন, তা হলে পুরভোট কবে? রাজ্য পুর দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘বালিকে পৃথক করে হাওড়া পুরসভার নতুন বিলে এখনও রাজ্যপাল সই করেননি বলেই জানা যাচ্ছে। তাই এখনই বলা সম্ভব নয়, কবে বালি বা হাওড়ায় পুরসভা ভোট হবে।’’