তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র।
বন্যাও দমিয়ে রাখতে পারেনি জয়পুরের ভাটোরার মুখোপাধ্যায় পরিবারের পুজোকে। এই পুজোর বয়স তিনশো বছরেরও বেশি বলে দাবি পরিবারের সদস্যদের। ১৯৭৮ সালের বন্যায় সারা রাজ্যের সঙ্গে এই এলাকাও যখন বানভাসি হয়ে গিয়েছিল সেই বছরেও পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল বলে জানান পরিবারের সদস্য তাপস মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ। এই সত্য মেনে নিয়েই পুজোর প্রস্তুতি নিই। কোনও অবস্থাতেই দশভূজার পুজো বন্ধ করা যাবে না।’’
মুখোপাধ্যায় পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের পূর্বপুরুষ ছিলেন বর্ধমানের বাসিন্দা। পেশায় ছিলেন তাঁরা পুজারী। বর্ধমানের মহারাজার কাছ থেকে নিষ্কর জমি পেয়ে তাঁরা চলে আসেন হাওড়ার দ্বীপ এলাকা এই ভাটোরা গ্রামে। এই এলাকা মুণ্ডেশ্বরী ও রূপনারায়ণ নদ দিয়ে ঘেরা। প্রকতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ক্লান্ত এই এলাকার মানুষরা বাইরে পুজো দেখতে যেতে পারতেন না। তাঁরা যাতে এখানেই দুর্গাপুজোর আনন্দ পেতে পারেন, সেই কারণেই এই পরিবারের তিন ভাই বাঞ্ছারাম, বিদ্যা ও বাগীশ শুরু করেন দুর্গাপুজোর।
মুখোপাধ্যায় পরিবার এখন অনেক বেড়েছে। শরিকের সংখ্যা অসংখ্য। বস্তুত তাঁদের নিয়েই গড়ে উঠেছে একটি আস্ত পাড়া। পুজোর সময় সবাই মিলেমিশে এক হয়ে যান। মেতে ওঠেন পুজোর আয়োজনে। পুজো আয়োজনের দায়িত্ব শরিকরা ভাগ করে নেন। তাপস বলেন, "যেহেতু তিন ভাই এই পুজো শুরু করেছিলেন, তাই সেই তিন ভাইয়ের উত্তর পুরুষরা এক এক দিনের পুজোর দায়িত্ব নেন। বিজয়া দশমী পালন করেন সব শরিক এক সঙ্গে।’’
এ বছরেও এই এলাকায় মুণ্ডেশ্বরীর জল ঢুকে নিচু এলাকাগুলি প্লাবিত হয়েছে। তার মধ্যেও জোর কদমে চলছে পুজোর প্রস্তুতি। তাপস বলেন, ‘‘অনেক সময় নদীর জল বাড়লেও বন্যা হয় না। কিন্তু রাস্তাঘাট পুকুর ডুবে যায়। তখন আমাদের যে সব শরিক একটু দূরে থাকেন, তাঁরা শালতিতে (শালের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি ছোট নৌকা) পুজোর আয়োজনে সাহায্য করতে মন্দিরে আসেন। এর জন্য আমরা শালতি ভাড়া করি। উদ্দেশ্য, কোনও পরিস্থিতেই যেন পুজোর কাজে ব্যাঘাত না ঘটে। এটাই ছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের নির্দেশ।’’
পুজোর জন্য আছে মন্দির। সেখানেই তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। বরাবর এই প্রতিমা হয় একচালায়। বিসর্জন করা হয় মুখোপাধ্যায় পরিবারের পারিবারিক পুকুরেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই খড়ের কাঠামো তুলে এনে রেখে দেওয়া হয় মন্দিরে। প্রতিমার কাঠামো মন্দিরের বাইরে এক মুহুর্ত রাখা যায় না বলে মুখোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা জানান।
শুধু এই পরিবারের সদস্যরাই নন, গ্রামের বাসিন্দারাও এই বাড়ির পুজো দেখতে ভিড় করেন। এই গ্রামে একাধিক দুর্গাপুজো হয়। কিন্তু যেহেতু পুরো এলাকায় এই পুজোই প্রথম শুরু হয়েছিল, তার ফলে এর
মান্যতা আলাদা।