বন্ধ ডানলপ কারখানা। — ফাইল চিত্র।
চৌহদ্দি যেন খণ্ডহর!
যন্ত্রের আওয়াজ থেমে নিঃস্তব্ধতা চারদিকে। সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানা বুঝি ইতিহাসের ধ্বংসাবশেষ! গত বিধানসভা ভোটের আগেও গাড়ির টায়ার তৈরির এই কারখানা চালু করা নিয়ে গালভরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল শাসক দল। সেই আশা দূরে সরে গিয়েছে ক্রমশ।
ডানলপের একাংশ রয়েছে সপ্তগ্রাম বিধানসভায়। বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত হুগলির রাজনীতিতে হেভিওয়েট। তার উপরে কৃষি বিপণনমন্ত্রী। তাঁর হাত ধরে উন্নয়নের ‘জোয়ার’ এসেছে বলে দাবি শাসক দলের। বিরোধীরা বলছেন, উন্নতি দূর, এই জনপদ পিছিয়ে পড়েছে। উদাহরণ হিসেবে হাতের সামনে আনছেন ডানলপ কারখানাকে। অভিযোগ, বহু যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে গিয়েছে ডানলপের। তথৈবচ অবস্থা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার। বাঁশবেড়িয়া, ত্রিবেণী, মগরার বিভিন্ন এলাকা জুড়ে দুষ্কৃতীরাজ চলে। পুকুর ভরাট, বন্দুকের মুখে জমি দখল, কারখানায় লোক ঢোকানো, ব্যান্ডেল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে (বিটিপিএস) ঠিকাদারি, ব্যবসায়ীদের থেকে মাসোহারা আদায়, জমি-বাড়ি বেচাকেনা থেকে টু-পাইস ইনকাম— শাসক দলের একাংশের মদতে সবই চলেছে বলে অভিযোগ। গত লোকসভা ভোটের পরে মন্ত্রীঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত দলের নেতা দেবরাজ পালের বিরুদ্ধে ওই সব অভিযোগ তুলে রাস্তায় নামে তৃণমূলেরই একাংশ।
লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে অনেক ভোটে পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল। তপনবাবুকে দলের জেলা সভাপতির পদ থেকে সরতে হয়েছে। জেলায় দলের কোর কমিটিতে তিনি অবশ্য রয়েছেন। দলবিরুদ্ধ কাজের অভিযোগে সম্প্রতি বাঁশবেড়িয়ার পুর-প্রশাসক তথা বিদায়ী পুরপ্রধান অরিজিতা শীলের স্বামী সত্যরঞ্জন ওরফে সোনা শীলকে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল।
বিরোধীদের দাবি, প্রকৃত উন্নয়ন অধরাই। হাসপাতালে পরিষেবা মেলে না। একটা কলেজ রয়েছে। আরও একটা দরকার। তার উদ্যোগ নেই। যে কাজ হয়েছে, তা-ও স্বচ্ছ ভাবে হয়নি। সপ্তগ্রাম শিল্পাঞ্চল ক্রমে বিবর্ণ হয়েছে। অনেক কারখানা বন্ধ। তৃণমূলের উৎপাতে বিটিপিএস-এর অবস্থাও খারাপ। দু’টো পার্ক, ক’টা রাস্তা আর আলোকেই উন্নয়ন বলে? কর্মসংস্থানের প্রশ্নে শাসক দলরে শূন্য দিচ্ছেন বিরোধীরা।
দীর্ঘ সাড়ে চার দশক রাজনীতিতে পোড়খাওয়া তপনবাবু উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে চাপা দিতে চাইছেন বিরোধীদের অভিযোগ। তাঁর দাবি, রাস্তা, আলোর মতো রুটিন কাজের পাশাপাশি অনেক কাজ হয়েছে। ত্রিবেণী শ্মশানঘাট সংস্কার এবং অতিথিশালা করা হয়েছে। বাঁশবেড়িয়া পুর-হাসপাতালের মানোন্নয়ন করা হয়েছে। মগরা গ্রামীণ হাসপাতাল অন্য বিধানসভায় হলেও সেখানে জেনারেটরের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘পবন রুইয়া মামলা করায় ডানলপ চালু করা যায়নি। বিচারাধীন বিষয় বলে এর বেশি কিছু বলব না। প্রয়োজনের সময় টানা তিন বছর ওখানকার শ্রমিকদের খাবার দিয়েছি। এখন রাজ্য সরকার ভাতা দিচ্ছে। বড় শিল্প না এলেও ছোট কারখানা হয়েছে। পোর্ট ট্রাস্টের অনুমতি না মেলায় গঙ্গার উপরে রোপওয়ে করা যায়নি।’’
বিধায়ক আরও জানান, মগরা এবং সপ্তগ্রামের উপর দিয়ে ১১০০ কোটি টাকা খরচে উড়ালপুল হচ্ছে। ওই কাজ শেষ হলে হুগলি, বর্ধমান এবং নদিয়ায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে মানুষের অনেক সুবিধা হবে। বাগাটি কলেজে, বাঁশবেড়িয়া এবং সপ্তগ্রামে তিনটি অডিটোরিয়াম করা হচ্ছে। শিবপুরে একটি আইটিআই এবং একটি বিএড কলেজের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অধিকাংশ বাড়িতে পরিশুদ্ধ জল পৌছে দেওয়ার কাজ হয়েছে। বাকী কাজও চলছে।
বিরোধীদের অপশাসন আর অনুন্নয়নের অভিযোগ, নাকি বিধায়কের ‘কাজ’— ভোটারের মনে বেশি ছাপ ফেলবে কোনটা, সময়ই তার উত্তর দেবে।