তরুণ বয়সে বিদ্যাসাগর।
বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান বীরসিংহ গ্রামে, সবাই জানি। কিন্তু সে বীরসিংহ তখন মেদিনীপুরের নয়, হুগলির। মেদিনীপুরের বীরসিংহে বিদ্যাসাগর এক রাতও কাটাননি।
১৮২০-র ২৬ সেপ্টেম্বর বিদ্যাসাগর যে বীরসিংহ গ্রামে জন্মেছিলেন, সেই গ্রাম তখন ছিল হুগলির আরামবাগ (তৎকালীন জাহানাবাদ) মহকুমার ঘাটাল থানার অন্তর্গত। বিদ্যাসাগরের ৭১ বছরের মহাজীবনের মধ্যে ৫১ বছর অতিবাহিত হয় হুগলির বীরসিংহে। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগরের বয়স যখন ৫২, তখন ঘাটাল মেদিনীপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। ফলে, বীরসিংহও চলে যায় মেদিনীপুরে। পরে ওই জেলা ভাগ হয়। বীরসিংহ যায় পশ্চিম মেদিনীপুরে।
বীরসিংহ মেদিনীপুরে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঠিক আগে বিধবা বিবাহকে কেন্দ্র করে বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর জ্ঞাতিদের বিরোধ হয়। যিনি বিধবা বিবাহের প্রবর্তক, সেই বিদ্যাসাগরই কোনও এক কারণে এক বিধবার পুনর্বিবাহ মেনে নিতে পারেননি। তাঁর অন্য ভাইয়েরা বিদ্যাসাগরকে না জানিয়ে সেই বিধবার বিয়ের ব্যবস্থা করেন। এ ঘটনায় বিদ্যাসাগর যারপরনাই রুষ্ট ও বীতশ্রদ্ধ হন। তিনি তাঁর ভাই ও গ্রামবাসীদের সামনে প্রকাশ্যে প্রতিজ্ঞা করেন, বীরসিংহ গ্রামে তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় ও অন্যান্য সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান তাঁর কাছ থেকে আগের মতোই আর্থিক সাহায্য ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবে। সহযোগিতায় তাঁর হাত আগের মতোই প্রসারিত থাকবে। কিন্তু তিনি নিজে এরপর কোনও দিনই তাঁর জন্মস্থানে পা রাখবেন না।
এই ঘটনার পরে আরও দু’দশক বেঁচে ছিলেন বিদ্যাসাগর। কিন্তু তিনি প্রতিজ্ঞায় অটল ছিলেন আমৃত্যু। তাঁর জীবনের শেষ ১৯ বছর বীরসিংহ ছিল মেদিনীপুরের সঙ্গে যুক্ত। শেষের এই ১৯ বছরে তিনি এক দিনের জন্যেও আসেননি তাঁর জন্মস্থানে।
অর্থাৎ, বীরসিংহ যতদিন হুগলিতে ছিল, ততদিন বিদ্যাসাগর সেখানে থেকেছেন, গিয়েছেন। যে দিন থেকে বীরসিংহ মেদিনীপুরে চলে গেল, সে দিন থেকে বিদ্যাসাগর আর সেখানে যাননি। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব।
তথ্য: বিভাংশু দত্ত, অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক।