বন্ধ রেলগেট। তা সত্ত্বেও সেটা টপকেই চলছে পারাপার। পান্ডুয়ায়। ছবি: সুশান্ত সরকার
উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহে রবিবার রাতে লেভেল ক্রসিং পেরিয়ে রেললাইনে গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়ার দৃশ্য টিভিতে দেখে অনেকেই আঁতকে উঠেছিলেন। সেই ঘটনায় দু'জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও সাধারণ মানুষ কতটা সচেতন হলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ সোমবারই হুগলি জেলার বিভিন্ন এলাকায় লেভেল ক্রসিং কিংবা সরাসরি লাইন পারাপারের দৃশ্য এতটুকু বদলাল না।
এ দিন বিকেলে সিমলাগড় স্টেশনের কাছে রেলগেট বন্ধ দেখেও পার হচ্ছিলেন এক বৃদ্ধ। তাঁকে প্রশ্ন করতেই উত্তর এল, ‘‘খুব তাড়া আছে। তাই যাচ্ছি।’’ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, "মানুষ সচেতন না হলে দুর্ঘটনা এড়ানো বড় কঠিন। নিজের প্রাণের মূল্য মানুষকে উপলব্ধি করতে হবে। না হলে শুধু ধরপাকড়, জরিমানা করে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব নয়।’’
পূর্ব রেলের হাওড়া-বর্ধমান মেন ও কর্ডন লাইনে হুগলি জেলার মধ্যে ২০টিরও বেশি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। ব্যান্ডেল-কাটোয়া লাইনে এই জেলায় লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা কমবেশি ১০। এ ছাড়াও, তারকেশ্বর থেকে গোঘাট পর্যন্ত ১২টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে মেন লাইনে রিষড়া স্টেশন লাগোয়া, বৈদ্যবাটীতে জিটি রোড, শ্রীরামপুর স্টেশনের কাছে, পান্ডুয়ায়, কাটোয়া লাইনে সাহাগঞ্জ ঈশ্বরবাহায় জিটি রোড প্রভৃতি লেভেল ক্রসিংগুলিতে প্রতিনিয়ত নিয়ম ভাঙেন পথচারী থেকে সাইকেল, বাইক আরোহীরা, এমনটাই অভিযোগ। কখনও-সখনও রেলগেট পড়ার সময়ের শব্দ শুনে দ্রুত গতিতে লাইন পারাপার করেন যাত্রী কিংবা পণ্যবাহী গাড়ির চালকেরা। ফলে, দুর্ঘটনাও ঘটে।
রেল সূত্রের খবর, গোটা দেশে ২৯ হাজারের মতো লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজারের মতো ক্রসিংয়ে রক্ষী (গেটম্যান) রয়েছেন। বাকিগুলিতে নেই। রক্ষিবিহীন লেভেল ক্রসিংগুলিতে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে, গেটম্যান থাকা ক্রসিংগুলিতেও দুর্ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। কারণ, মানুষের চরম ব্যস্ততা। শুধু লেভেল ক্রসিং নয়, গোটা দেশে রেললাইন পারাপার করতে গিয়ে রোজ গড়ে ৮০০ মানুষ কাটা পড়েন।
পান্ডুয়ার জয়পুর রেলগেট, সিমলাগড় রেলগেট-সহ বিভিন্ন রেলগেটে দেখা যায়, গেট পড়ে যাওয়ার পরেও বেশ কিছু মানুষ তার তলা দিয়ে সাইকেল বা মোটরবাইক নিয়ে পারাপার করছেন। পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত ও পরিবহণ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ বিরাজেন্দ্রনাথ চৌধুরী বলেন, ‘‘মানুষকে আগে সচেতন হতে হবে।’’ একই দাবি, চুঁচুড়ার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, প্রাক্তন রেলকর্মী বিপুল বসুরায়েরও। তিনি জানান, প্রতি বছর গোটা বিশ্ব ‘আন্তর্জাতিক লেভেল ক্রসিং সচেতনতা দিবস’ পালন করে।
তাঁর প্রশ্ন, এখানে মানুষ সচেতন হচ্ছেন কই!