জাঙ্গিপাড়ার কুলাকাশ গ্রামের গাবতলার কাছে রাস্তার হাল এমনই। —নিজস্ব চিত্র।
বেজায় সমস্যায় পড়েছেন জাঙ্গিপাড়া ব্লকের কুলাকাশ গ্রামের বাসিন্দারা। রণের খালের বাঁধের উপরে সাত কিলোমিটার রাস্তা গ্রামের একমাত্র ভরসা। অথচ সেটা বেহাল পড়ে দীর্ঘ দিন। আশা ছিল, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে ‘পথশ্রী’ প্রকল্পে হাল ফিরবে রাস্তার। কিন্তু অবস্থা বদলাল না।
চণ্ডীতলার মশাট পঞ্চায়েতের কদমতলা থেকে বনমালীপুর চৌমাথা পর্যন্ত ‘রাস্তাশ্রী’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু মাঝপথে সেই কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
‘পথশ্রী-রাস্তাশ্রী’ প্রকল্পে কাজ শুরুর বোর্ড পড়ে গোঘাট-১ ব্লকের শ্যাওড়া পঞ্চায়েতের উত্তরপাড়ার গ্রামীণ রাস্তায়। সেখানে সাড়ে ৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজ শুরুই হয়নি আজও।
হুগলি জুড়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত প্রকল্পে পথের হাল এমনই। জেলা প্রশাসনের হিসেব বলেছে, ১৮টি ব্লকের মোট ৬০৭টি রাস্তার মধ্যে গড়ে ৫০ শতাংশ কাজ হয়েছে। জেলা পরিষদের আওতায় থাকা মোট ৭২টি রাস্তার ৪২টি সম্পূর্ণ হয়েছে। কিছু এলাকায় রাস্তার কাজে হাতই পড়েনি। কোথাও ভুল করে অন্য ঠিকাদারি সংস্থা কাজ শুরু করায় রাস্তার একাংশে কাজ হওয়ার পরে সব থমকে গিয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘বেশ কিছু রাস্তার কাজ বাকি, এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই। কাজ চলছে। আশা করি, শীঘ্রই লক্ষ্যপূরণ হবে।’’
ঢাকঢোল পিটিয়ে চলতি বছরের ২৮ মার্চ রাজ্যে ‘পথশ্রী’ প্রকল্পের কাজ সিঙ্গুরের রতনপুর-লাগোয়া এলাকা থেকে উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিশ্রুতি ছিল, ওই প্রকল্পে সারা রাজ্যে মোট ১২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা হবে। প্রকল্পে হুগলির ১৮টি ব্লকে ৬০৯টি রাস্তার অনুমোদন হয়েছিল। যার মধ্যে সংস্কারের পাশাপাশি নতুন রাস্তাও ছিল। উদ্বোধনের পরে প্রায় পাঁচ মাস অতিক্রান্ত।
জেলায় রাস্তার কাজে অবশ্য খুশি নন বাসিন্দারা। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রী সিঙ্গুরের রতনপুরের কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেস-লাগোয়া যে জায়গায় ওই প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন, সেই রাস্তার কাজও এখনও অসম্পূর্ণ।
জাঙ্গিপাড়া ব্লকের কুলাকাশ গ্রামের রণের খালের বাঁধের উপরে সাত কিলোমিটার রাস্তাও হয়নি।
গ্রামের বাসিন্দা তাপস মাহিন্দ্রা বলেন, ‘‘প্রকল্পের উদ্বোধনের কিছু দিন পরে রাস্তার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু এক কিলোমিটার রাস্তা হওয়ার পরে কাজ বন্ধ। ব্লক অফিস থেকে বলা হয়, যে ঠিকাদারি সংস্থা বরাত পেয়েছিল, তারা ওই কাজ করেনি। অন্য একটি সংস্থা ভুল করে কাজটি শুরু করে।’’
জাঙ্গিপাড়া-লাগোয়া চণ্ডীতলা-১ ব্লকেও কাজের গতি ভাল নয়। ২১টি রাস্তা অনুমোদন হয়েছিল। তার মধ্যে মাত্র চারটি রাস্তার কাজ এখনও পর্যন্ত হয়েছে বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর। মশাট পঞ্চায়েতের কদমতলা থেকে বনমালীপুর চৌমাথা পর্যন্ত রাস্তাশ্রী প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু মাঝপথে সেই কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
শুধু শ্রীরামপুর মহকুমা নয়, জেলা সদর চুঁচুড়া এবং চন্দননগর মহকুমার ছবিটাও একই। আরামবাগে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে কাজ শুরুর বোর্ড পড়ে গোঘাট-১ ব্লকের শ্যাওড়ার উত্তরপাড়ার গ্রামীণ রাস্তায়। সেই সাড়ে ৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজ শুরুই হয়নি। গোঘাট-২ ব্লকের প্রকল্পের আওতায় মোট ২৬টি রাস্তার মধ্যে পঞ্চায়েত সমিতির অধীন যে ১৭টি রাস্তা রয়েছে, তার মধ্যে ১৪টি সম্পূর্ণ হয়েছে। খানাকুল-২ ব্লকে ২৩টির মধ্যে ৮টির কাজ চলছে। মহকুমার মোট ১৮৯টি রাস্তার সার্বিক হিসাবে ৫০-৬০ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে বলে ব্লক প্রশাসনের খবর।