পলাশপাই এভারগ্রিন ক্লাবের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
ডিভিসি-র ছাড়া জলে এলাকার নদনদীগুলি ক্রমশ ভরে উঠছে। নিম্নচাপ জারি থাকায় টানা বৃষ্টিও অব্যাহত। ফলে, বন্যার আশঙ্কাও বাড়ছে এলাকাবাসীর। তাতে অবশ্য দুর্গাপুজোয় প্রস্তুতিতে ছেদ পড়ছে না আরামবাগ মহকুমার বন্যাপ্রবণ খানাকুলের দু’টি ব্লকে।
পারিবারিক কিছু পুজো বাদে অধিকাংশ পুজোরই বাজেট বেড়েছে। অধিকাংশ ক্লাবের পুজোতে ১ লক্ষ থেকে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা বাজেট বেড়েছে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। খানাকুলের দুটি ব্লকে অনুমোদিত পুজোর সংখ্যা ১৬৫টি বলে থানা সূত্রে জানা গিয়েছে।
এখানে সবচেয় বড় বাজেটের পুজো করে খানাকুল ২ ব্লকের রূপনারায়ণ এবং দ্বারকেশ্বর নদের গায়ে ধান্যগোড়ির ‘মা দুর্গা সেবা সঙ্ঘ’। এ বার পুজোর থিম ‘আঙিনায় মা’। পুজো কমিটির সহ-সম্পাদক রাহুল গুছাইত বলেন, ‘‘এ বার আমাদের গত বারের চেয়ে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা বাজেট বাড়িয়ে ২২ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। মণ্ডপসজ্জা থেকে শুরু করে সবটাই পরিবেশবান্ধব।’’ বন্যার আশঙ্কানিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রতি বছরের মতোই এ বারেও বন্যার আশঙ্কাকরেই এগোচ্ছি। মণ্ডপের কাজ চলছে। বন্যা হলেও আমাদের সমাজসেবামূলক কাজ চলবেই। বন্যাপীড়িত মানুষদের পাশে থাকার দায় থাকে আমাদের।’’
এই পুজোটি ছাড়া বাকি ক্লাবের পুজোর বাজেট ৭ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে। একই ব্লকের আর একটি বড় পুজো মুণ্ডেশ্বরী নদী সংলগ্ন পলাশপাইয়ের এভারগ্রিন ক্লাবের। পুজোর বাজেট এ বার প্রায়১০ লক্ষ টাকা। পুজো কমিটির সম্পাদক তথা জেলা পরিষদ সদস্য কালিপদ অধিকারী বলেন, ‘বন্যা নিয়ে আশঙ্কা তো আছেই। তবেএখন অতীতের তুলনায় বাঁধের ভাল কাজ হয়েছে। এ বার নদীর জল বেরিয়ে যাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।’’ একই কথা জানিয়েছেন পলাশপাইয়ের মুচিঘাটা বাজারসংলগ্ন ভারতমাতা ক্লাবের কমল দে, শতদল ক্লাবের পীযূষ জানা এবং তরুণ দল ক্লাবের সন্দীপ কারক।
একই রকম ভাবে খানাকুল ১ ব্লকের খানাকুল গ্রামের বয়েজ ক্লাবের পুজো কমিটির সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় বায়েন বলেন, ‘‘বন্যার কথা মাথায় রেখেই প্রতি বছর পুজোর আয়োজন করি। এ বার বাজেট ১ লক্ষ বাড়িয়ে ৮ লক্ষ টাকা করেছি। সবই বায়না হয়ে গিয়েছে। মণ্ডপ প্রায় শেষ।’’
খানাকুলের দুই ব্লকের পুজো কমিটিগুলির পক্ষে জানানো হয়েছে, বন্যার কথা ভেবে প্রতি বছর সবাই প্রতিমা নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে রাখে। মণ্ডপ ডুবে গেলেও যাতে পুজো সারা যায়, সেই ব্যবস্থা থাকে। বন্যা হলে পুজোর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান জাতীয় বিনোদনমূলক কর্মসূচি ছাঁটাই করে সেই অর্থে অনুষ্ঠানের দিনগুলিতে
বস্ত্র বিতরণ-সহ নানা ভাবে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়। স্বাস্থ্য শিবিরও হয়। দশমীর দিন বসিয়ে খাওয়ানো হয় বন্যাপীড়িত মানুষদের। পুজো কমিটিগুলির বাজেট বরাদ্দের সিংহভাগ টাকার জোগান দেন ভিন রাজ্যে সোনা, রুপো, জরি ইত্যাদির কাজে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকরা। তাঁদের শর্ত থাকে সমাজসেবামূলক কাজের।