টিকার অপেক্ষায় প্রবীণরা। চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে। ছবি: তাপস ঘোষ
ভ্যাকসিন বাড়ন্ত। বুধবার উলুবেড়িয়া শহরে টিকা পেলেন না সাধারণ মানুষ। টিকার খোঁজে এসে ফিরতে হল খালি হাতে।
সংক্রমণ লাগামহীন ভাবে বাড়তে থাকায় টিকা নেওয়ার হিড়িক পড়েছে সর্বত্র। উলুবেড়িয়াতেও একই ছবি। প্রতিদিন টিকাকেন্দ্রের সামনে লম্বা লাইন পড়ছে। যদিও, টিকার জোগান অপ্রতুল।
এ দিন পুরসভার বিভিন্ন টিকাকরণ কেন্দ্রের সামনে গিয়ে লোকজন দেখেন, ভ্যাকসিন না থাকার নোটিস সাঁটা। ফলে, তাঁদের ফিরে যেতে হয়। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁদের মধ্যে কঙ্কনা মাজি নামে এক বৃদ্ধা বলেন, ‘‘দু’দিন ধরে এলাম। টিকা পেলাম না। আশেপাশে করোনা ছেয়ে যাচ্ছে। টিকা নেওয়া থাকলে অনেকটা নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। কবে পাব জানি না।’’ পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিৎসক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘ভ্যাকসিন যা ছিল, শেষ হয়ে গিয়েছে। ভ্যাকসিন এলেই দেওয়া শুরু হবে।’’
হুগলির বিভিন্ন টিকাকরণ কেন্দ্রের সামনে এ দিনও যথারীতি ভিড় জমে। তবে, সব জায়গাতেই নির্দিষ্ট সংখ্যক লোকই ভ্যাকসিন পেয়েছেন। বাকিদের খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ লেগে থাকলেও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, বিশেষ সমস্যা কোথাও নেই।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভ্যাকসিন মজুতের ক্ষেত্রে এই জেলায় কোনও দিনই খুব খারাপ অবস্থা ছিল না। সপ্তাহখানেক যে ঘাটতি দেখা যাচ্ছিল, তা-ও অনেকটা কেটে গিয়েছে।’’
ওই স্বাস্থ্যকর্তা যা-ই বলুন, ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত জোগানের দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। পাশাপাশি প্রতিটি কেন্দ্রে টিকার লাইনে বিশেষত বয়স্ক এবং অশক্ত মানুষদের ন্যূনতম স্বাচ্ছ্যন্দের দাবিও উঠছে। নাগরিক সংগঠন ‘অল বেঙ্গল সিটিজেন্স’ ফোরামের সদস্যদের দাবি, কোন্নগরের কানাইপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে টিকার লাইনে প্রচুর ভিড় হচ্ছে। তুলনায় খুব কম লোকই টিকা পাচ্ছেন। যথাসম্ভব বেশি লোককে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা
করা হোক।
টিকাকরণ নিয়ে এ দিন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে নানা দাবি জানান ওই সংগঠনের সভাপতি শৈলেন পর্বত। তাঁর দাবি, বৈশাখের গরম সহ্য করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিকার লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। হয়রানি এড়াতে বয়স্ক, অশক্ত এবং প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। প্রতিটি কেন্দ্রে অপেক্ষারত মানুষদের জন্য ছাউনি, পানীয় জলের বন্দোবস্ত প্রভৃতির দাবিও জানানো হয়। টিকা নেওয়ার পরে আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় শরীরে কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণের জন্য। সেই কারণে বড় পরিসরের এবং পর্যাপ্ত আলো-বাতাসযুক্ত বিশ্রামকক্ষের দাবি জানানো হয়।
শৈলেনবাবু বলেন, ‘‘পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে অপেক্ষমাণ লোকদের জন্য পাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে বলে শুনেছি। এ জন্য প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই। প্রশাসন উদ্যোগী হলে সর্বত্রই এই ধরনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’’
এ বার থেকে আঠেরো বছর পেরোলেই মিলবে টিকা। কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, বিনামূল্যে তা দেওয়া হবে না। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং সকলের জন্য বিনামূল্যে টিকাকরণের দাবিতে হুগলির জেলাশাসক এবং মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে ই-মেল মারফত স্মারকলিপি দেয় আরএসপি-র ছাত্র ও যুব সংগঠন। টিকা নিয়ে বিশৃঙ্খলা দূর করারও দাবি জানানো হয়।