চে গেভারার মেয়ে আলেইদা গেভারার। — ফাইল চিত্র।
চন্দননগরে নয়, সারা ভারত বিশ্ব শান্তি ও সংহতি সংস্থা-সহ বিভিন্ন বাম গণ-সংগঠনের আহ্বানে আজ, শনিবার উত্তরপাড়ায় আসার কথা চে গেভারার মেয়ে আলেইদা গেভারার। সঙ্গে থাকবেন তাঁর মেয়ে এস্তেফানিয়া মাচিন গেভারাও। শহরের গণভবনে তাঁদের গণ-সংবর্ধনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চন্দননগরে অনুষ্ঠান না-হওয়া নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
উত্তরপাড়ার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক জ্যোতিকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, চে-কন্যা ও নাতনিকে উত্তরপাড়ার বালিখালে অভ্যর্থনা জানানো হবে। সেখান থেকে মিছিল করে নাচ-গানের মাধ্যমে বরণ করে গণভবনে নিয়ে যাওয়া হবে। চে’র সঙ্গে বাঙালির আবেগ জড়িত। তাই তাঁর কন্যার আগমনে মানুষ উৎসাহিত। বিশেষত, তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন। প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশের ক্ষেত্রে মহিলাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। প্রেক্ষাগৃহের বাইরে বড় টিভি লাগিয়ে অনুষ্ঠান দেখানো হবে।
প্রথমে ঠিক ছিল ওই অনুষ্ঠান হবে চন্দননগরে। উদ্যোক্তারা জানান, ওই শহরে অনুষ্ঠানের অনুমতি মেলেনি। পরিবর্ত জায়গা হিসাবে উত্তরপাড়াকে বাছা হয়। চন্দননগরে অনুষ্ঠান না-হওয়ায় উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, বামেদের আয়োজনে অনুষ্ঠান হওয়ায় ‘তুচ্ছ’ কারণ দেখিয়ে অনুমতি দেওয়া হয়নি। অভিযোগ মানেননি চন্দননগরের পুর-কর্তৃপক্ষ বা মহকুমা প্রশাসন সূত্র।
সিপিএমের চন্দননগর এরিয়া কমিটির সম্পাদক পিনাকী চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘পুরসভা এবং মহকুমাশাসকের থেকে অনুষ্ঠানের অনুমতি মেলেনি।’’ তিনি জানান, প্রথমে রবীন্দ্রভবনে অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। আমন্ত্রণপত্রও ছাপানো হয়। কিন্তু, ‘রাজনৈতিক অনুষ্ঠান’ তকমা দিয়ে (সম্প্রতি চন্দননগর পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রবীন্দ্রভবনে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা যাবে না) তা বাতিল করা হয়। এর পরে মানকুণ্ডু সার্কাস মাঠে ওই অনুষ্ঠান করতে চাইলেও মহকুমাশাসকের অনুমতি মেলেনি। পরে চে-কন্যা চন্দননগরের ফরাসি স্থাপত্য দেখতে আসবেন, এই আবেদন জানিয়েও বিফল হতে হয়। উত্তরপাড়ায় অনুমতি পেতে সমস্যা হয়নি।
পিনাকীর প্রশ্ন, ‘‘একই জেলায় দু’রকম ব্যাপার! মনে হচ্ছে, রাজ্যের এক জন মন্ত্রী চাননি বলেই চন্দননগরে অনুমতি মেলেনি।’’ প্রশাসন সূত্রে খবর, সার্কাস মাঠে অনুষ্ঠানের আবেদনের ক্ষেত্রে মহকুমাশাসক সংযুক্ত নাগরিক কমিটির সম্পাদককে চিঠি দিয়ে ওই দুই বিদেশি অতিথির চন্দননগরে আসা বা থাকার ব্যাপারে রেজিস্ট্রেশন অফিসারের অনুমতিপত্র এবং ওই সংগঠনের তরফে তাঁদের অনুষ্ঠান করা নিয়ে ভারত সরকারের ছাড়পত্রজমা দিতে বলেন। উদ্যোক্তারা তাদিতে পারেননি।
উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, ওই কাগজ চাওয়া অজুহাত। এত দ্রুত দিল্লি থেকে ওই কাগজ আনা সম্ভব ছিল না। তা ছাড়া উত্তরপাড়ার ক্ষেত্রে ওই কাগজের দরকার হয়নি।
রবীন্দ্রভবন প্রসঙ্গে বামেদের অভিযোগ মানেননি মেয়র রাম চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, রবীন্দ্রভবনে ২২ থেকে ২৬ জানুয়ারি ছোটদের ছায়াছবি উৎসব হবে। সাউন্ড সিস্টেম ইত্যাদি প্রস্তুতি চলছে। সেই কারণে ওই প্রেক্ষাগৃহ দেওয়া সম্ভব ছিল না। উদ্যোক্তাদের জ্যোতিরিন্দ্রনাথ সভাগৃহে অনুষ্ঠান করতে বলা হলেও আয়তন ছোট বলে ওঁরা করতে চাননি। রাজনীতির কোনও ব্যাপার এতে নেই।’’
চন্দননগরের মহকুমাশাসক অয়ন দত্তগুপ্তের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তিনি ফোন ধরেননি। মোবাইলে লিখে বক্তব্য জানাতে বলেন। তা সত্ত্বেও জবাব মেলেনি।