প্রতীকী ছবি।
উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি প্রাপ্তির জন্য শংসাপত্র (ওয়ারিশন সার্টিফিকেট) প্রয়োজন। সে জন্য দিনকয়েক আগে হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জলাঘাট মহেশতলা লেনের বাসিন্দা শুভজিৎ দে গিয়েছিলেন এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর সুপর্ণা সেনের কাছে। ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির অজুহাতে তাঁর কাছ থেকে এ জন্য দু’হাজার টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে সুপর্ণার বিরুদ্ধে। এমনকি, টাকা না দিলে শুভজিতের মায়ের বিধবা-ভাতার আবেদন আটকানোর হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে দু’পক্ষের কথোপকথনের একটি অডিয়ো-ক্লিপ ‘ভাইরাল’ হয়েছে। আনন্দবাজার ওই অডিয়ো-ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি। সুপর্ণা অবশ্য টাকা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, ‘‘শুভজিৎকে কোনও ভাবেই টাকার জন্য চাপ দেওয়া হয়নি। শুধু বলেছিলাম, ‘দুয়ারে সরকার’ করতে গেলে অনেক খরচ হয়। সেই বাবদ ওই যুবকের কাছ থেকে দু’হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিল।’’
কাটমানি বা তোলাবাজি কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না বলে বারবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা সত্ত্বেও দলের এক শ্রেণির নেতা-কর্মীর কানে সেই হুঁশিয়ারি আদৌ পৌঁছেছে কি না, তা নিয়ে বহু ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে। এ বার চুঁচুড়ার ঘটনাতেও অস্বস্তিতে পড়ল শাসক দল।
পুরপ্রধান অমিত রায় বলেন, ‘‘ঘটনাটি আমরা কানেও এসেছে। পুরো অভিযোগ সঠিক ভাবে খতিয়ে দেখে আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’’ চুঁচুড়া শহর তৃণমূল সভাপতি সঞ্জীব মিত্র বলেন, ‘‘এ ভাবে কেউ কারও থেকে টাকা চাইতে পারে না। অভিযোগ সত্য প্রমাণ হলে দল কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’’
শুভজিৎ জানান, গত ১৫ এপ্রিল ওই শংসাপত্রের জন্য তিনি সুপর্ণার বাড়ির অফিসে গিয়েছিলেন। সেখানে উপস্থিত আর এক তৃণমূল নেতা প্রথমে শংসাপত্রের জন্য তাঁর কাছে দু’হাজার টাকা দাবি করেন। কাউন্সিলরও ওই নেতার কথায় সায় দেন। শুভজিতের দাবি, ওই নেতা তাঁকে জানান, ওয়ার্ড চালাতে গেলে কাউন্সিলরের টাকার প্রয়োজন হয়। সেই খরচ বহনের জন্য শুভজিতকে টাকা দিতে হবে।
শুভজিৎ বলেন, ‘‘ওই নেতার কথার প্রতিবাদ তো দূরের কথা, কাউন্সিলর টানা সায় দিয়ে যান। শেষে তিনি হুমকি দেন, টাকা দিতে না পারলে আমার মায়ের বিধবা-ভাতার আবেদন পত্র বাতিল করে দেওয়া হবে।’’ হুমকির অভিযোগ অবশ্য সুপর্ণা মানেননি।
সুপর্ণা এবং ওই নেতার কথা তিনিই মোবাইলে রেকর্ড করেন বলে জানান শুভজিৎ। তার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘আপলোড’ করে দেন। শুভজিৎ বলেন, ‘‘এ ছাড়া আমার আর কী-ই বা করার ছিল? আমি সাধারণ মানুষ।’’
বিরোধীরা যথারীতি ঘটনা নিয়ে টিপ্পনী কাটছে। বিজেপির হুগলি সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক সুরেশ সাউ বলেন, ‘‘তৃণমূল টাকা তুলবে, এ আর নতুন কী? এ সব হয়েই থাকে।’’ পুরসভার সিপিএম কাউন্সিলর বিপ্লব দাস বলেন, ‘‘একজন সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ কাম্য নয়।’’