প্রতীকী ছবি।
হাওড়া শহরে দ্রুত করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এ বার ২৫টি জায়গাকে চিহ্নিত করে কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করল জেলা স্বাস্থ্য দফতর। আজ, মঙ্গলবার থেকে ওই এলাকাগুলি গার্ড রেল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হবে। বসবে পুলিশি পাহারা। সেখানকার বাসিন্দাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ দিকে, শহরে সংক্রমণ বাড়লেও কোভিড হাসপাতালগুলিতে রোগী ভর্তির সংখ্যা কম বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। কোভিড হাসপাতালগুলিতে এক হাজার শয্যার ব্যবস্থা থাকলেও মাত্র ৩৬ জন এখনও পর্যন্ত ভর্তি রয়েছেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, নতুন স্ট্রেনে আক্রান্তদের অধিকাংশ বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়ে উঠছেন।
সংক্রমণ কমাতে ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে সোমবার থেকেই জোরকদমে কাজ শুরু করেছে হাওড়া জেলা প্রশাসন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর, পুরসভা ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগে কন্টেনমেন্ট জ়োন চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ২৫টি এলাকা চিহ্নিত করা হলেও এই সংখ্যা দরকারে আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, হাওড়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন দ্বিগুণ বাড়লেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা এখনও কম। অধিকাংশই বাড়িতে আইসোলেশনে থাকছেন।
করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা যে জেলায় দ্রুত গতিতে বাড়ছে, তা ২ জানুয়ারি স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন থেকেই স্পষ্ট। ওই বুলেটিন অনুযায়ী, হাওড়ায় তার আগের ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৯৫ জন। ১ জানুয়ারি সেই সংখ্যাটা ছিল ২৯৫। আক্রান্তদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা বা টেলিমেডিসিনের উপরেই জোর দিচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এর জন্য জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর হল ৯০৭৩৯২২৯০১। এখানে ফোন করে করোনা আক্রান্তেরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারবেন। তবে সরকারি হাসপাতালগুলিতে করোনা চিকিৎসার জন্য সব রকম পরিকাঠামোই তৈরি রাখা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
হাওড়া জেলা হাসপাতাল, বালিটিকুরি ইএসআই করোনা হাসপাতাল, উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালের মতো সরকারি হাসপাতালগুলিতে প্রায় এক হাজার শয্যা করোনার চিকিৎসায় বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে বালিটিকুরি ইএসআই করোনা হাসপাতালেই ৩০০টি শয্যা বরাদ্দ করা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হাসপাতালগুলিতে ভর্তি মোট রোগীর চার জনকে সিসিইউতে রাখা হয়েছে। বাকি ৩২ জনের মধ্যে সাত জনকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে হাওড়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘যতটা সম্ভব ভিড় কমিয়ে সংক্রমণ আটকানোর চেষ্টা চলছে। নৈশ কার্ফুতে নাকা তল্লাশির কাজ শুরু করে দিয়েছে পুলিশ। যে সব জায়গায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, সেখানে মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট জ়োন করা হয়েছে।’’
এ দিকে, জেলায় করোনা প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ কার্যত শেষের দিকে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে দাবি করা হয়েছে। হাওড়ায় ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে প্রায় ৩৬ লক্ষ বাসিন্দাকে প্রতিষেধক দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৩২ লক্ষ ৬৭ হাজার
বাসিন্দা প্রথম ডোজ় নিয়েছেন হাওড়া থেকে। দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া হয়েছে ২২ লক্ষ ১১ হাজার বাসিন্দাকে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, হাওড়ার প্রায় ২ লক্ষ বাসিন্দা কলকাতা থেকে প্রতিষেধক নিয়েছেন। ফলে বর্তমানে অল্প কিছু বাসিন্দারই প্রতিষেধক নেওয়া বাকি। এ দিন থেকে স্কুলে স্কুলে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হয়েছে। জেলায় প্রায় আড়াই লক্ষ ছাত্রছাত্রী এর আওতায় পড়ছে। সোমবার যোগেশচন্দ্র গার্লস হাইস্কুলে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে।