শেষ ১২ দিনে আক্রান্ত ১০ হাজার
Coronavirus in West Bengal

রেখচিত্রে সংক্রমণের লম্বা লাফ হুগলিতে

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা এই জেলাকে কতটা বেসামাল করেছে, পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। গত বছরের মার্চে রাজ্যে সংক্রমণ শুরু হয়। তখন দেশ জুড়ে লকডাউন চলছে।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২১ ০৭:৫৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

ঢেউয়ের বিশালতা বুঝতে পরিসংখ্যানই যথেষ্ট।

Advertisement

হুগলি জেলায় মোট করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা সোমবার ৫০ হাজারে পৌঁছল। তার মধ্যে ৩০ হাজারে পৌঁছতে সময় লেগেছিল এক বছর। পরের ২০ হাজার পার মাত্র ৪৪ দিনে। শেষ ১০ হাজার সাকুল্যে ১২ দিনে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা এই জেলাকে কতটা বেসামাল করেছে, পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। গত বছরের মার্চে রাজ্যে সংক্রমণ শুরু হয়। তখন দেশ জুড়ে লকডাউন চলছে। হুগলিতে প্রথম সংক্রমণের ঘটনা ওই মাসের শেষে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভাঙতে জনজীবনে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে প্রশাসন। তবুও সংক্রমণ বাগে আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। হুগলি জেলার ক্ষেত্রেও একই ছবি দেখা যাচ্ছে।

Advertisement

সংক্রমণ বৃদ্ধির পাশাপাশি জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের চিন্তায় রেখেছে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ৫০০। গত এক মাসে মৃত্যু হয়েছে ১০০ জনেরও বেশি। এর মধ্যে শেষ ১৫ দিনে মারা গিয়েছেন প্রায় ৭৫ জন।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, দ্বিতীয় পর্যায়ে করোনাভাইরাস শুধু দ্রুত হারে সংক্রমণ ছড়াচ্ছেই না, সংক্রমিতের শরীরে নানা জটিলতা তৈরি করছে। বহু ক্ষেত্রেই সংক্রমিতের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে। এই অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তির প্রবণতা অনেকটাই বেড়েছে। জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে করোনা চিকিৎসা চালু করা হয়েছে। কিন্তু সর্বত্রই কার্যত ঠাঁইনাড়া অবস্থা।

স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের আশঙ্কা, উপসর্গহীন অনেক সংক্রমিত রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি বেশি। সেই কারণে তাঁর পরামর্শ, নিতান্ত প্রয়োজন না থাকলে কেউ যাতে রাস্তায় না বের হন। বেরোলেও মাস্ক পরা, দূরত্ব রেখে কথা বলা বা ঘন ঘন হাত ধোওয়ার মতো কাজগুলি করে যেতেই হবে। ওই স্বাস্থ্যকর্তার আর্জি, ‘‘সংক্রমিতের বাড়ির লোকেদেরও নিজেদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোনও উপসর্গ তাঁদের মধ্যে না থাকলেও যথাসম্ভব ঘরবন্দি থাকা দরকার।’’

কোভিডের উপসর্গ রয়েছে, অথচ পরীক্ষা করানো হয়নি বা রিপোর্ট আসেনি, এমন রোগীরা সমস্যায় পড়ছেন বেশি। অভিযোগ, পজ়িটিভ রিপোর্ট না থাকলে সরকারি হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রশাসনের ‘হেল্পলাইন নম্বর’ থেকে সাড়া মিলছে না। অথচ, এমন রোগীদের জন্য সরকারি হাসপাতালে ‘সারি’ ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। কেউ কেউ বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে ভর্তি হচ্ছেন গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে। গৃহ-নিভৃতবাসের ক্ষেত্রে টেলি-মেডিসিনের মাধ্যমে প্রশাসনের তরফে চিকিৎসা করা হচ্ছে। করোনা রিপোর্ট না থাকলে এ ক্ষেত্রেও উপসর্গ থাকা রোগীরা সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। তাঁদের ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হচ্ছে।

অনেকেরই বক্তব্য, সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য লাইন এড়াতে অনেকে বেসরকারি ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষা করাচ্ছেন। রিপোর্ট পেতে অন্তত তিন দিন লাগছে। সে ক্ষেত্রে টেলি-মেডিসিনের সুবিধা পেতে তাঁদের রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বা সরকারি হাসপাতালে লাইন দিয়ে ডাক্তার দেখানো ছাড়া উপায় থাকছে না। সেই কারণে অনেকে ব্যক্তিগত ভাবে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

কঠিন পরিস্থিতি থেকে সমাজকে বাঁচাতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বা অনেকে ব্যক্তিগত ভাবেও রাস্তায় নেমেছেন। অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে ওষুধ বা খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে সংক্রমিতদের বাড়িতে। চিকিৎসকের সঙ্গে অসুস্থ ব্যক্তিকে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাড়িতে নিভৃতবাসে থাকা রোগীরা এতে অনেকটাই ভরসা পাচ্ছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement