তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে টিকা নিতে আসা মানুষের ভিড় সামলাচ্ছে পুলিশ। ছবি: তাপস ঘোষ।
এক মাস আগেও টিকাকরণ কেন্দ্রগুলো ছিল ফাঁকা। যে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, তার অনেকাংশই পূরণ হচ্ছিল না। গত কয়েক সপ্তাহে সংক্রমণের পারদ চড়ার সঙ্গে সঙ্গেই টিকা নেওয়ার জন্য হন্যে হয়ে পড়েছেন সকলেই। আর তার সঙ্গেই শুরু হয়েছে টিকার আকাল।
চুঁচুড়া-মগরা ব্লকের দেবানন্দপুর কাজিডাঙার কাছে রামনারায়ণ দেবদাস উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকাকরণ শুরু হয়েছিল। তবে দিন কয়েক ধরে টিকা না আসায় পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, যাঁদের প্রথম ডোজ় হয়ে গিয়েছে, তাঁরা দ্বিতীয় ডোজ় না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। ব্যান্ডেলের সাহেববাগান এলাকার বাসিন্দা বছর ৮১-র অনিল দে বলেন, ‘‘ এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকাকরণ শুরু হওয়ায় প্রথম ডোজ় নিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে টিকা দেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ দিকে দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। খুব চিন্তা হচ্ছে।’’
শুধু এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র নয়, স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দেওয়া টোকেন নিয়ে চুঁচুড়া সদর হাসপাতাল অথবা মগরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েও টিকা মিলছে না। এলাকাবাসীকে এই হয়রানি থেকে মুক্তি দিতে অবিলম্বে পুনরায় টিকাকরণ চালুর দাবিতে সিপিএমের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে এক স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘ভ্যাকসিন কম থাকার কারণে ওই কেন্দ্রে টিকাকরণ বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে, উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে খুব শীঘ্রই যাতে টিকাকরণ শুরু করা যায়।’’ তবে কবে থেকে পরিষেবা স্বাভাবিক হবে, উত্তর মেলেনি
হাওড়ার উলুবেড়িয়ার অবস্থাও তথৈবচ। মঙ্গলবার টিকা দেওয়া হবে বলে, নোটিশ দেওয়া হয়েছিল উলুবেড়িয়া পুরসভার স্বাস্থ্যভবনের দেওয়ালে। কিন্তু সোমবার বিকেলের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় ভ্যাকসিন। ফলে ফের টিকাদানের দিন বদল করে নোটিশ ঝোলানো হয়।
বিষয়টি না জানতে পেরে মঙ্গলবার সকালে থেকেই লাইন দিতে শুরু করেন বহু বয়স্ক মানুষ। ফিরে যেতে হয় তাঁদের সকলকেই। পরিতোষ ঘুকু নামে এক বৃদ্ধ টোটো ভাড়া করে এসেছিলেন টিকা নিতে। তিনি বলেন, ‘‘এই মাসের প্রথমেই পুরসভার পক্ষ থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল কবে কবে ভ্যাকসিন দেবে। সেই মতো দু’দিন এসেছিলাম। কিন্তু লম্বা লাইন দেখে ফিরে গিয়েছিলাম। আর আজ এসে দেখি, টিকাকরণ বন্ধ। এত ভোগান্তি আর নেওয়া যাচ্ছে না।’’
অণিমা সাউ নামে এক স্কুল শিক্ষিকা এসেছিলেন মঙ্গলবার টিকার দ্বিতীয় ডোজ় নিতে। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম ডোজ় নেওয়ার সময় বলেছিলেন ৪২ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ় নিতে। সেই অনুযায়ী এসে দেখি, সব বন্ধ। সময় মতো দ্বিতীয় ডোজ় না নিলে তো কোনও কাজ হবে না।’’ মঙ্গলবার উলুবেড়িয়া ইএস আই হাসপাতাল ও বৃন্দাবনপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রেও টিকা নিতে এসে ফেরত যাওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকেই।
এক টিকাকরণ কেন্দ্রের কর্মীর কথায়, ‘‘এই সমস্যার জন্য মানুষও কিছুটা দায়ী। তিন মাস আগে যখন টিকাকরণ শুরু হল, তখন অনেকেই নিতে চাইছিলেন না। ফাঁকা ছিল টিকাকরণ কেন্দ্র। আর এখন সংক্রমণ বাড়তেই সকলে টিকা নেওয়ার জন্য দৌড়দৌড়ি করছেন। আগে থেকে মানুষ সচেতন হলে এখন এমন সঙ্কট হত না হয়তো।’’
উলুবেড়িয়া পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিৎসক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের কাছে যতটা মজুত ছিল ততটাই আমরা দিতে পেরেছি। পুনরায় ভ্যাকসিন এলে টিকাকরণ শুরু হবে।’’