উলুবেড়িয়া ইএসআই হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেওয়ার ভিড়। ছবি সুব্রত জানা।
খাতায়-কলমে হয়তো খরা কাটল। হাওড়া এবং হুগলি জেলায় পৌঁছল কোভিড ভ্যাকসিন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অল্প। ফলে, সঙ্কট সে ভাবে মোকাবিলা করা গেল না।
হাওড়ায় দৈনিক ২০ হাজার ভ্যাকসিন প্রয়োজন। সেখানে শুক্রবার রাতে এসেছে মাত্র ১৫ হাজার। ফলে, টিকাকরণের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা কাটেনি। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা জানান, শনিবার টিকাকরণ হয়েছে। ফের ভ্যাকসিন না এলে টিকাকরণ স্থগিত করে দিতে হবে।
তবে, কোভ্যাক্সিনের জোগান রয়েছে। সমস্যা কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে। প্রথম দিকে মূলত কোভিশিল্ড ব্যবহার করা হয়। ফলে, দ্বিতীয় ডোজ়ের ক্ষেত্রেও কোভিশিল্ডই দিতে হবে। কিন্তু এই ভ্যাকসিন বাড়ন্ত থাকায় বহু মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া যাচ্ছে না। শনিবার ১৫ হাজার কোভিশিল্ড মিলেছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘যা ভ্যাকসিন এসেছে, কোনওমতে ঠেকা দিয়ে চালাতে হবে। ফের অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই।’’
শনিবার বাউড়িয়ার ময়লাপুকুর স্টেট জেনারেল, উলুবেড়িয়া ইএসআই হাসপাতালে টিকার জন্য লম্বা লাইন পড়ে। সেখানে দূরত্ব-বিধি মানা হয়নি। এ দিকে, জেলায় সংক্রমণ বাড়ছেই। মাস্ক পরার হার অবশ্য কিছুটা বেড়েছে। পুলিশ এবং উলুবেড়িয়া পুরসভার তরফে স্বাস্থ্যবিধি মানার আবেদন জানিয়ে মাইকে প্রচার চলছে।
হুগলিতেও শুক্রবার রাতে এবং শনিবার সকালে অল্প পরিমাণ ভ্যাকসিন এসেছে। শনিবার বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু জায়গায় ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া হয়েছে। প্রথম ডোজের সন্ধানে সরকারি খাতায় নাম লিখিয়ে হন্যে হয়ে ঘুরেছেন মানুষজন। আরামবাগ মহকুমার ছ’টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দৈনিক ভ্যাকসিনের চাহিদা ন্যূনতম ২ হাজার। কয়েক দিন এখানে ভ্যাকসিন ছিল না। শুক্র ও শনিবার সাকুল্যে ৫০০ করে ভ্যাকসিন মিলেছে। এখনও পর্যন্ত হুগলিতে ৬ লক্ষেরও বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে বলে জানান মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী। এই জেলায় লোকসংখ্যা প্রায় ৬০ লক্ষ।
এ দিকে, শ্রীরামপুরে করোনা মোকাবিলায় শনিবার বৈঠক হয় পুরসভায়। এই শহরে গত এক সপ্তাহে গড়ে প্রায় ৪০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। দু’জনের মৃত্যুও হয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, গৃহ-নিভৃতবাসে থাকা রোগীকে চিকিৎসার পরামর্শ বা হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে সাহায্য করা হবে। ওয়ার্ডভিত্তিক স্যানিটাইজ় করা হবে। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, সংক্রমণ যাতে না ছড়ায়, সে জন্য মানুষকে সাবধান করতে মাইকে প্রচার, লিফলেট বিলি করা হবে। অন্য জায়গা থেকে কেউ শহরে এলে তিন থেকে সাত দিন পর্যন্ত বাড়ি থেকে না বেরনোর অনুরোধ করা হবে। পুরসভার তরফে কোভিড রোগীদের জন্য একটি অ্যাম্বুল্যান্স চালানো হবে ন্যূনতম ভাড়ায়। কোভিডে মৃতের দেহ দাহের জন্য শহরে একটি শ্মশান নির্দিষ্ট করার চেষ্টা চলছে।
এ দিন স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসা চালুর বন্দোবস্ত করার আর্জি জানান। কোভিডের প্রথম পর্যায়ে এই হাসপাতালে রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে করোনা-চিকিৎসা হয়। তবে, এখনও প্রায় ৮ কোটি টাকা সরকারের কাছে তাদের পাওনা বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।