প্রতীকী ছবি।
জেলা হাসপাতালে শুধু নয়, ধর্ষণের অভিযোগকারিণীর ডাক্তারি পরীক্ষা করানোর অনুমতি দেওয়া হোক জেলার সমস্ত সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে। হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে এমনই আবেদন করা হয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে। সূত্রের খবর, কারণ হিসেবে জানানো হয়েছে, দৈনন্দিন পরিষেবার চাপ সামলে ধর্ষণের মামলায় অভিযোগকারিণীদের ডাক্তারি পরীক্ষা করার মতো পরিকাঠামো হাওড়া জেলা হাসপাতালে নেই। তবে, এই আবেদন মঞ্জুর হলে তাতে অভিযোগকারিণীদের হয়রানি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, উলুবেড়িয়া মহকুমা বাদে হাওড়ার শহর ও গ্রামীণ এলাকায় থানা রয়েছে ২০টি। ওই সব থানা থেকে বর্তমানে ধর্ষণের মামলা আসে প্রতিদিন গড়ে সাত-আটটি। সব মামলার ক্ষেত্রেই অভিযোগকারিণীদের হাওড়া জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি। অথচ, হাওড়ায় সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে ১২টিরও বেশি।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী যে কোনও সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই মেডিক্যাল পরীক্ষা করা যেতে পারে। কিন্তু তা না করে ধর্ষণের মামলার সব অভিযোগকারিণীদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় হাওড়া জেলা হাসপাতালে। হাসপাতালে এত রোগী সামলানোর পরে প্রতিদিন গড়ে ৭-৮ জনের পরীক্ষা করার বিষয়টি রোগী পরিষেবার ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি করছে।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, হাওড়া জেলা হাসপাতাল হাওড়ার সব চেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল। সেখানে শয্যা রয়েছে ৬৩০টি। অধিকাংশ শয্যাই প্রতিদিন ভর্তি থাকে। এ ছাড়া, ওই হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগের বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য রোজ এক হাজারেরও বেশি রোগী আসেন। এর সঙ্গেই রোজ প্রায় লাইন পড়ে যাচ্ছে ধর্ষণ সংক্রান্ত মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য। হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগের রোগী সামলে প্রতিদিন এই পরীক্ষা করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। শুধু মেডিক্যাল পরীক্ষাই নয়, মামলা চলাকালীন প্রয়োজনে আদালতে সাক্ষ্য দিতেও যেতে হচ্ছে তাঁদের। যে দিন সাক্ষ্যদানের তারিখ পড়ছে, ওই দিন হাসপাতালে অনেকটা সময় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক পরিষেবা দিতে পারছেন না। অভিযোগ, এ সব কারণে অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে হাওড়া জেলা হাসপাতালের রোগী পরিষেবার কাজ। দূর থেকে এসে রোগীরা পরিষেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এই সমস্ত কথা মাথায় রেখেই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে ওই আবেদন পাঠানো হয়েছে বলে খবর।
তবে, এই আবেদন ঘিরে রয়েছে একাধিক প্রশ্ন। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিষেবা এবং পরিকাঠামোগত একাধিক খামতির অভিযোগ বারবারই ওঠে। এমনকি, সেখানে ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরিষেবাটুকুও না পাওয়া, রোজ চিকিৎসক বা নার্স না থাকারও বহু অভিযোগ উঠেছে। এমন অবস্থায় ওই সব জায়গায় ধর্ষণ সংক্রান্ত স্পর্শকাতর মামলার মেডিক্যাল পরীক্ষা আদৌ কী ভাবে করানো সম্ভব, সেই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠছে। হাওড়া জেলা হাসপাতালে রোগী ও চিকিৎসকদের হয়রানি এড়াতে এই আবেদন ধর্ষণের মামলার অভিযোগকারিণীদের হয়রানি বাড়িয়ে দেবে কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে। তা ছাড়া, জেলার সব চেয়ে বড় সরকারি হাসপাতালে কেন সমস্ত পরিষেবা সামলানোর উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে না, সামনে আসছে সেই প্রশ্নটিও।