বালি পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
বিভিন্ন পুরসভার সঙ্গে দিনকয়েক আগে বৈঠকে হাওড়ার পাশাপাশি কার্যত বালিকেও নাগরিক পরিষেবা নিয়ে ‘তুলোধোনা’ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, শহরাঞ্চলের অধিকাংশ পুরসভা এলাকাতেই লোকসভা ভোটে ফল ভাল হয়নি তৃণমূলের। যার নেপথ্যে সেখানকার নাগরিক পরিষেবার ব্যর্থতা মূল কারণ বলে পর্যবেক্ষণ তৃণমূলের নেতৃত্বেরও। দীর্ঘ দিন বালিতে পুর বোর্ড না থাকার জেরে সেখানেও এমনটা ঘটেছে বলেই দাবি বাসিন্দাদের।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বালি বিধানসভা তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত। বালি, বেলুড় ও লিলুয়া— এই তিন অঞ্চল মিলিয়ে বালি পুরসভায় মোট ৩৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। এর মধ্যে বালি অঞ্চলের ১০টি ওয়ার্ড বাঙালি অধ্যুষিত। তাঁদের একটা বড় অংশই বালির বহু দিনের পুরনো বাসিন্দা। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে, ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল ১৭১৭৭টি এবং বিজেপি ১১৬৫২টি ভোট পেয়েছে। ২০২১-এর বিধানসভার তুলনায় ২০২৪-এর লোকসভায় বিজেপির প্রাপ্ত ভোট অনেকটা বেড়েছে। বিধানসভায় বিজেপির ভোট ছিল ৮৮৭৫টি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ, সেই জায়গায় তৃণমূলের ভোট কিছুটা হলেও কমেছে। বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলে বিরোধীদের ভোট বৃদ্ধির নেপথ্যে দীর্ঘ দিন ঠিকঠাক নাগরিক পরিষেবা না পাওয়ায় বাসিন্দাদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ বা বিরক্তি একটা বড় কারণ বলেই মনে করছেন অনেকে।
এ-ও দেখা যাচ্ছে, ওই ১০টি ওয়ার্ডে শুধু বিজেপির প্রাপ্ত ভোটই বাড়েনি, তার মধ্যে ২ নম্বর ওয়ার্ডে শাসকদল হেরেছে। আর বেলুড় ও লিলুয়া মিলিয়ে বাকি ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টি ওয়ার্ডেও (১২, ১৫, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৩৫) হার হয়েছে তৃণমূলের। বাসিন্দাদের বড় অংশের অভিযোগ, ‘‘দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নাগরিক পরিষেবা কার্যত শিকেয়। পুরসভার আধিকারিকদের একাংশ নিজেদের মতো করে চেষ্টা করেন ঠিকই, কিন্তু তাতে সবটা সামলানো সম্ভব হচ্ছে না়।’’ পাশাপাশি তাঁদের এটাও প্রশ্ন, ‘‘পুর বোর্ড না থাকলেও একটি দক্ষ প্রশাসকমণ্ডলী কেন থাকবে না?’’
যে সমস্ত পুরসভায় পুরপ্রতিনিধি নেই, সেখানে কী ভাবে কাজ চালানো যাবে তা নিয়ে পুরমন্ত্রীকে মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলে একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সূত্রেই বালির বাসিন্দাদের মত, যদি একান্তই পুর ভোট না হয়, তা হলে স্থানীয় রাজনৈতিক স্তরের দক্ষ সংগঠকদের নিয়ে কোনও প্রশাসকমণ্ডলী তৈরি করা হোক। তাতে অন্তত পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সুরাহা মিলতে পারে। কিন্তু আদৌ সেটা কবে হবে, তা নিয়েও যে সংশয় রয়েছে, সেটাও বলছেন বাসিন্দারাই। তাঁদের কথায়, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে এমন পরিকল্পনার কথা শুনলেও বালির ক্ষেত্রে কিছুই হয়নি।’’
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেই পানীয় জল, জঞ্জাল অপসারণ থেকে রাস্তা সংস্কার নিয়ে পদক্ষেপ করেছেন বালি পুরসভার কার্যনির্বাহী আধিকারিক। কিন্তু স্থানীয় কোনও সমস্যায় বার বার বাসিন্দাদের পুরসভা কার্যালয়ে ছুটে যাওয়া আটকাতে আদৌ কোনও প্রশাসকমণ্ডলী গঠন হবে কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আর নাগরিক পরিষেবার বেহাল অবস্থা দীর্ঘায়ত হতে থাকলে বাসিন্দাদের ক্ষোভে তা ঘৃতাহুতির কাজ করে বিরোধীদের পাল্লা আরও ভারী হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে বলেও মত রাজনৈতিক মহলের।