—প্রতীকী চিত্র।
সরকারি জমি দখল করে মন্দির তৈরির নামে তোলাবাজি করতে গিয়ে প্রকাশ্য রাস্তায় প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালাল এক দল দুষ্কৃতী। অভিযোগ, তাদের দাবি মতো টাকা না দেওয়ায় ঘণ্টাখানেক আটকে রেখে মারধর করা হয়েছে এক চিকিৎসককে। এমনকি, মারের হাত থেকে রেহাই পাননি সেখানে ঘুরতে আসা একটি পরিবারের চার জন সদস্য ও পথচলতি সাধারণ মানুষও। রবিবার রাতে ভয়াবহ এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার ডুমুরজলা খেল সিটির রিং রোডে। নিগৃহীত চিকিৎসক-সহ আক্রান্ত সকলের অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালালেও পুলিশের দেখা মেলেনি। এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শাসক ও বিরোধী দলের নেতা থেকে মন্ত্রীরা। শেষমেশ বেশি রাতে পুলিশ এই ঘটনায় ন’জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের নাম রাহুল রায়, নাগেশ সিংহ, প্রিয়াংশু ঘোষ, সানি দাস, ফাহাদ আহমেদ, মহম্মদ দিলনাওয়াজ, রেহান নইম, আলিফ আহমেদ ও এহতেশাম শামি।
ডুমুরজলায় খেল সিটি তৈরি হওয়ার পরে চার দিকের সৌন্দর্যায়ন করা হয়েছে। তাই প্রতিদিন বিকেল-সন্ধ্যায় বহু মানুষ খেল সিটি সংলগ্ন রিং রোডে বেড়াতে আসেন। লোকজনের ভিড় হয় বলে রিং রোডের উত্তর দিকে চা-কফি ও নানা ধরনের খাবারের স্টল বসতে শুরু করেছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন চেম্বার সেরে এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে চা খেতে এসেছিলেন এক চিকিৎসক। তিনি জানান, তাঁরা যখন বাস্কেটবল মাঠের উল্টো দিকে রিং রোডের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলেন, তখন দেখেন, গাড়ি নিয়ে সেখানে আসা একটি পরিবারের সদস্যদের বেধড়ক মারধর করছে ১৫-২০ জন যুবক। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই যুবকদের কয়েক জন আচমকা তাঁর কাছে এসে মন্দির তৈরির জন্য দু’হাজার টাকা দাবি করে। অভিযোগ, টাকা দিতে না চাওয়ায় ওই চিকিৎসকের জামার কলার ধরে তাঁর বুকে ও পিঠে নির্বিচারে ঘুষি মারতে শুরু করে তারা। চিকিৎসকের বন্ধু তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তিনিও আক্রান্ত হন।
আতঙ্কিত ও সন্ত্রস্ত ওই চিকিৎসক সোমবার বলেন, ‘‘ওই যুবকেরা প্রত্যেকেই ছিল নেশাগ্রস্ত। অত্যন্ত কুৎসিত ভাষায় গালিগালাজ করছিল আমাদের। ওরা শুধু ওই পরিবারের লোকজন এবং আমাদের নয়, পথচলতি অন্যদেরও বেপরোয়া ভাবে আক্রমণ করছিল। আমাকে এমন ভাবে ঘিরে রেখে দিয়েছিল যে, মনে হচ্ছিল, প্রাণ নিয়ে আর বোধহয় বাড়ি ফিরতে পারব না।’’ চিকিৎসক জানান, তিনি কোনও মতে তাঁর বন্ধু, মধ্য হাওড়ার যুব কংগ্রেস সভাপতি অভিষেক চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করে ঘটনার কথা জানিয়ে পুলিশি সাহায্য চান। যদিও পুলিশ তখন আসেনি বলে অভিযোগ। পরিবর্তে এক জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে পাঠানো হয়। ওই চিকিৎসক বলেন, ‘‘ওই যুবকেরা আমাকে উদ্ধার করতে আসা সিভিক ভলান্টিয়ারকেও মারধর করে। তিনি ভয়ে কেঁদে ফেলেন। তবে, শেষ পর্যন্ত তাঁর চেষ্টাতেই ঘটনাস্থল থেকে পালাতে পারি আমি।’’
এই ঘটনা প্রসঙ্গে এ দিন মধ্য হাওড়ার যুব কংগ্রেস সভাপতি বলেন, ‘‘ভয়ঙ্কর ঘটনা! আক্রান্ত চিকিৎসক আমার বন্ধু বলেই বলছি না, এই ঘটনা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’’ ঘটনার পরে ওই চিকিৎসক এবং আক্রান্ত পরিবারের সদস্যেরা চ্যাটার্জিহাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তার পরে অভিযুক্ত ন’জনকে গ্রেফতার করে। স্থানীয়দের অনেকেরই আশঙ্কা, গ্রেফতার করলেও পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে লঘু ধারা দেবে না তো?
তাঁদের অভিযোগ, বাস্কেটবল মাঠের উল্টো দিকে সম্প্রতি একটি গাঁজার ঠেক গজিয়ে উঠেছে। সেখানেই কিছু বহিরাগত দুষ্কৃতী সরকারি জমি দখল করে মন্দির তৈরি করছিল। সেই মন্দিরের জন্যই খেল সিটিতে ঘুরতে আসা লোকজনের থেকে চলছিল বেলাগাম তোলাবাজি। মধ্য হাওড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘নগরপালকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছি। সরকারি জায়গা দখল করে মন্দির করতে গিয়ে যারা তোলাবাজি করছিল, তাদের রেয়াত করা হবে না।’’
হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। অভিযোগ পাওয়ার পরে ন’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’