কুপনে তৃণমূলের প্রতীক। সঙ্গে মমতা-অভিষেকের ছবিও। নিজস্ব চিত্র।
সম্প্রতি শ্যামপুরের বাছরী অঞ্চলে রক্তদান শিবির করতে যুব তৃণমূলের তরফে দলের প্রতীক দিয়ে চাঁদা তোলার অভিযোগ উঠেছিল। এ বার দলের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন উপলক্ষে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে একই ভাবে চাঁদা তোলার অভিযোগ উঠল শ্যামপুরেরই বাড়গ্রামের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এখানে আবার এক ধাপ এগিয়ে দলীয় প্রতীকের সঙ্গে ছাপানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি।
আগামী ১ জানুয়ারি তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে দিনের বেলা ওই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। আর সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পুরো অনুষ্ঠানের দায়িত্বে রয়েছেন অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি ও বাড়গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কুন্তল বেরা ও হাওড়া জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য জুলফিকার মোল্লা। চাঁদা তোলার কথা স্বীকার করে কুন্তলের সাফাই, ‘‘পুরো অনুষ্ঠানটি করার লক্ষ লক্ষ টাকা দরকার। তাই চাঁদা তুলতে হচ্ছে। আমরা কোনও জুলুম করিনি।’’ জুলফিকারের সংযোজন, ‘‘মানুষ ভালোবেসে দশ-কুড়ি টাকা চাঁদা দিচ্ছেন। বিরোধীরা এটা সহ্য করতে না পেরে কুৎসা রটাচ্ছে।’’
তবে এলাকার বাসিন্দারা এই চাঁদা নিয়ে বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। এলাকার এক শিক্ষক বলেন, ‘‘এলাকায় শিক্ষকতা করার জন্য চার জন শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছ থেকে চাঁদা কাটা হয়েছে দেড় হাজার টাকা। এটা তোলাবাজি।’’ এক বৃদ্ধের কথায়, ‘‘কেউ লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা পেলে তাঁর থেকে ৫০ টাকা ও বার্ধক্য ভাতা পেলে ১০০ টাকা চাঁদা কাটা হচ্ছে। তৃণমূলের অনুষ্ঠানের জন্য সাধারণ মানুষ কেন টাকা দেবে?’’ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তাঁদের থেকেও মোটা টাকা চাওয়া হচ্ছে। একই ব্যক্তির ভিন্ন ব্যবসা কেন্দ্র থেকে পৃথক ভাবে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে।
রক্তদান শিবিরের নামে এ ভাবে টাকা তোলা নিয়ে সরব হয়েছে রক্তদান আন্দোলন নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিও। তাদের দাবি, শিবির করতে ইচ্ছুকদের সরকারি ও বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে যে অনুদান দেওয়া হয়, তা সেটাই যথেষ্ট। ‘স্বেচ্ছায়’ রক্তদান শিবিরে চাঁদা তোলার কথা নয়।
বিষয়টি নিয়ে আতান্তরে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। লোকসভা ভোটের আগে বিষয়টি নিয়ে ভুল বার্তা যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। হাওড়া গ্রামীণ জেলা তৃণমূলের সভাপতি সমীর পাঁজা আগেই বলেছিলেন, এ ভাবে চাঁদা তোলাটা বেআইনি। বাড়গ্রামের এই ঘটনা প্রসঙ্গে হাওড়া গ্রামীণ জেলা তৃণমূলের সভাপতি ও বাগনান কেন্দ্রের বিধায়ক অরুনাভ সেন বলেন, ‘‘যে কোনও অনুষ্ঠানে চাঁদা তোলা দল থেকে নিষিদ্ধ। তার উপরে এ ভাবে দলের প্রতীক ও নেত্রীর ছবি ব্যবহার করা যায় না। অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
বিরোধীরা অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। হাওড়া গ্রামীণ জেলা বিজেপি সভাপতি অরুণ উদয় পালচৌধুরী বলেন, ‘‘তৃণমূল রক্তদান শিবির করছে না। ওরা রক্তচোষা কর্মসূচি করছে। আমরাও এমন শিবির করি। কর্মীরাই তার জন্য টাকা দেন। মানুষের থেকে আমরা তোলা তুলি না।’’ হাওড়া জেলা সিপিএমের সম্পাদক দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘‘তৃণমূল তোলাবাজদের দল। এরা যেখানে সুযোগ পায়, সেখানে চুরি করে। তাই রক্তদান শিবিরকে সামনে রেখে চুরি করা শুরু করেছে।’’