ডাকঘরে লিঙ্ক না থাকায় হয়রান গ্রাহক। — ফাইল চিত্র।
ডাকঘরে যাওয়ার দরকার থাকলে দুপুর পর্যন্ত অন্য কাজ রাখেন না কোন্নগরের হারাধন ঘোষ। কারণ, প্রায়ই ডাকঘরে ইন্টারনেটের ‘লিঙ্ক’ থাকে না। সংযোগ কখন আসবে, তার জন্য হাপিত্যেশ করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কখনও দু’-এক ঘণ্টার মধ্যে আসে। কোনও দিন আসেই না।
শুধু হারাধন নন। ডাকঘরে নিয়মিত যাঁরা যান, সকলের অভিজ্ঞতাই কার্যত এক। তাঁরা তিতিবিরক্ত। ভোগান্তির কথা জানিয়ে উচ্চমানের ইন্টারনেট পরিষেবার দাবিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিল নাগরিক সংগঠন ‘অল বেঙ্গল সিটিজেন্স ফোরাম’। সংগঠনের সভাপতি শৈলেন পর্বত বলেন, ‘‘একটু বেশি সুদের আশায় বহু মানুষ ডাকঘরে টাকা রাখেন। নিয়মিত ডাকঘরে যেতে হয়। পরিষেবা পেতে তাঁদের এত হয়রান হতে হবে কেন? মানুষের দুর্ভোগ সরকারের চোখে পড়ে না!’’
গ্রাহকদের একাংশ জানান, ইন্টারনেটের সংযোগ না থাকার সমস্যা পুরনো। মাঝে কিছুটা ভাল হয়েছিল। ফের বিগড়েছে। তাঁদের অভিযোগ, গত কয়েক মাসে সমস্যা বেড়েছে। প্রায় দিনই শুনতে হয়, ‘লিঙ্ক ফেলিয়োর’। হারাধন বলেন, ‘‘লিঙ্কের আশায় মানুষ ভিড় করে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। কোনও দিন দু’-আড়াই ঘণ্টা পরে সংযোগ আসে। কখনও আসে না। দুর্ভোগের একশেষ।’’ একই বক্তব্য শ্রীরামপুরের কবিতা দে, সিঙ্গুরের অসিত মুখোপাধ্যায়-সহ অনেকেরই।
ওই নাগরিক সংগঠনের সদস্যেরা জানান, হুগলি জেলার বিভিন্ন ডাকঘরে ঘুরে তাঁরা মানুষের সমস্যার কথা জেনেছেন। এই জেলার বিভিন্ন শহর ও গ্রামীণ এলাকায় বড় মাপের দেড়শোর বেশি ডাকঘর-ব্যাঙ্ক রয়েছে। এই সব ডাকঘরে লক্ষাধিক মানুষের সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। কিন্তু, ব্যাঙ্কের পাশবই ‘আপ-টু-ডেট’ করা হোক বা টাকা জমা ও তোলা— সব ক্ষেত্রেই ইন্টারনেটের সংযোগ না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয় তাঁদের। একই সমস্যা পাশের জেলা হাওড়াতেও। সংগঠনের এক সদস্য বলেন, ‘‘ডাকঘরের সেভিংস ব্যাঙ্কের গ্রাহক অর্ধেকের বেশি প্রবীণ নাগরিক। ডাকঘরে তাঁদের বসার ব্যবস্থাটুকু থাকে না। দু’চার ঘণ্টা দাঁড়াতে হলে, তাঁদের কী অবস্থা হয়, বুঝুন।’’
সিটিজেন্স ফোরামের তরফে কেন্দ্রীয় যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীর কাছে ই-মেল মারফত চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে এ রাজ্যের মুখ্য পোস্টমাস্টার জেনারেলকে। শৈলেন বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার যেখানে ডিজিটাল ইন্ডিয়া গড়ার কথা বলছে, সেখানে সাধারণ মানুষের ভরসার জায়গা ডাকঘরে ইন্টারনেট গরুর গাড়ির গতিতে চলবে বা থমকে থাকবে? হাস্যকর। দিনের পর দিন এই ভোগান্তি মেনে নেওয়া যায় না। লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চ শক্তিসম্পন্ন সার্ভার বসানো উচিত।’’