ভাঙা হয়েছে পাঁচিল। নিজস্ব চিত্র
চণ্ডীতলার কাপাসহাড়িয়া পঞ্চায়েতের সাহানা মৌজায় দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে ২৭১ শতক জমিতে একটি ওষধি গাছের প্রকল্প গড়তে উদ্যোগী হয়েছে একটি সংস্থা। কিন্তু তোলা না মেলায় পঞ্চায়েত প্রধানের নির্দেশে প্রকল্পের নির্মীয়মাণ পাঁচিলের একাংশ শুক্রবার ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সংস্থার কর্তারা। তাঁরা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। জেলাশাসক, গ্রামীণ জেলার পুলিশ সুপার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক তথা মন্ত্রী বেচারাম মান্নার কাছেও ডাকযোগে প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ মানেননি প্রধান, তৃণমূলের সুরজিৎ পাল।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। হুগলি গ্রামীণের পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী যা করার ওখানে করা হবে।
প্রধানের দাবি, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ। পাঁচিল কে ভেঙেছে না ভেঙেছে, বলতে পারব না। যেটুকু জানি বা সরেজমিনে দেখেছি, ওখানে অবৈধ ভাবে পাঁচিল তৈরি হচ্ছিল। নিকাশির ব্যবস্থা করা হয়নি।’’ নিকাশি নিয়ে অভিযোগ সংস্থার কর্তারা মানেননি।
‘শ্যাম শ্রী অ্যাপার্টমেন্টস প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে ওই সংস্থার অধিকর্তা শিউকুমার লদিয়া জানান, প্রধানের ‘অনৈতিক দাবি’ নিয়ে দিন কয়েক আগে তিনি হুগলির জেলাশাসক, গ্রামীণ জেলার এসপি, চণ্ডীতলা থানায় লিখিত ভাবে জানান। শিউকুমারের অভিযোগ, ‘‘এ বার পাঁচিলের কিছুটা ভেঙে দেওয়া হল। কর্মী এবং মিস্ত্রিদের কাছে আমাদের নামে গালিগালাজও করা হয়। এ রকম হলে, শিল্পের পরিবেশ থাকবে না।’’
শিউকুমার জানান, তাঁরা ওই জমি পাঁচিল দিয়ে ঘিরছেন। এ জন্য পঞ্চায়েতের বিধিবদ্ধ অনুমতি নিয়েছেন। উন্নয়নের কাজে পঞ্চায়েতে দু’দফায় ৩৩ হাজার টাকা দেন। অভিযোগ, পাঁচিলের কাজ নিজের লোক দিয়ে করাতে চেয়েছিলেন প্রধান। তা না হওয়ায় এক মাস আগে প্রধান কাজ বন্ধের নোটিস দেন কোনও কারণ ছাড়াই। কারণ জানতে চাইলেও জানানো হয়নি। দিন কয়েক আগে ফের কাজ বন্ধের নোটিস পাঠানো হয় নিকাশি ব্যবস্থা না থাকার কারণ জানিয়ে।
শিউকুমারের অভিযোগ, শুক্রবার বিকেলে পঞ্চায়েত সদস্য শেখ আব্দুল হাকিম এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ রেখা জানা দলবল নিয়ে এসে পাঁচিলের একাংশ ভেঙে দেন। তিনি বলেন, ‘‘তোলাবাজির জন্য প্রধান এ সব করছেন। পুলিশ-প্রশাসন আমাদের রক্ষা করুক।’’ প্রধানের পাল্টা দাবি, ‘‘আমাদের তরফে ওঁকে এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) দেওয়া হয়। উনি উন্নয়নের জন্য পঞ্চায়েতে টাকা দিয়েছেন, এটা ঠিক। তবে, ব্লক থেকে অনুমতি নেননি। পঞ্চায়েতে বার বার ডেকে পাঠানো হলেও আসেননি। আসলে, শিল্প করার ইচ্ছে ওঁর নেই। জমি কেনাবেচা করবেন।’’
রেখার প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে ওই সংস্থার তোলা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রধানের বিরুদ্ধে টাকা চাওয়ার অভিযোগও অসত্য। ওখানে মাফিয়াদের নিয়ে পাঁচিল তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ আসছিল।’’ পঞ্চায়েতের সদস্য এবং শিল্পের সঞ্চালক শেখ আব্দুল হাকিমের বক্তব্যও প্রায় একই।
পঞ্চায়েতের ওই দলীয় পদাধিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরিন্দম গুঁইন বলেন, ‘‘বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিচ্ছি।’’