সেবা: কুকুরছানাটির পরিচর্যায় কোয়েল। নিজস্ব চিত্র
শুকোতে দেওয়া কাপড় ছিঁড়ে দিয়েছিল মাস ছয়েকের একটি কুকুরছানা। সেই রাগে পথকুকুরটিকে কাটারি দিয়ে কোপালেন এক ব্যক্তি। শুক্রবার সকালে উলুবেড়িয়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামসুন্দরচক সর্দারপাড়ার এই ঘটনার পর রক্তাক্ত কুকুরটি রাস্তায় পড়ে ছটফট করছিল। তার ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসেন দুই কলেজপড়ুয়া। তাঁরাই কুকুরছানাটিকে উলুবেড়িয়া পশু চিকিৎসালয়ে নিয়ে যান। বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ জানানোর পর শনিবার পুলিশ আটক করে ওই অভিযুক্তকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষতবিক্ষত কুকুরছানাটি যখন রাস্তায় লুটিয়ে পড়েছিল, তখন তাকে প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসা করেন কোয়েল প্রামাণিক নামে ওই কলেজ পড়ুয়া। তিনি গ্রামের বাসিন্দাদের অনুরোধ করেন ছানাটিকে কোনও চিকিৎসালয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কোয়েলের কথায়, ‘‘আমাদের গ্রামীণ এলাকায় পশু চিকিৎলায়ের অভাব আছে। প্রথমে কুকুরটিকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে, সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। কেউ সাহায্যর জন্য এগিয়ে আসেননি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘লাইভ’ করার পর আমার এক বন্ধু আসে।’’ তাঁর সঙ্গেই অটো ভাড়া করে কুকুরটিকে নিয়ে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে উলুবেড়িয়া প্রাণী চিকিৎসালয়ে যান কোয়েল।
কাটারির কোপে কুকুরছানাটির ঘাড় ও পিঠের অনেকটা অংশের মাংস উঠে গিয়ে বড় গর্ত হয়ে গিয়েছিল। সেই গর্তে সেলাই পড়ে ৪২টি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আপাতত স্থিতিশীল অবস্থা তার। রামরাজাতলার ডক্টর কানাইলাল ভট্টাচার্য কলেজের এডুকেশনের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী কোয়েলের আক্ষেপ, ‘‘টিউশনির যে টাকা জমিয়েছি, সেটা দিয়েই কুকুরটার চিকিৎসা করিয়েছি। অথচ অবলা প্রাণীটাকে বাঁচানোর জন্য গ্রামবাসীর কটূক্তি শুনতে হচ্ছে। হুমকিও পাচ্ছি। পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি।’’
ঘটনা নিয়ে অনুতপ্ত আটক হওয়া ব্যক্তিও। তাঁর কথায়, ‘‘আসলে কুকুরছানাগুলো চারদিক নোংরা করে। ওই দিন রাগের মাথায় ভুল করে ফেলেছি। আর কখনও এমন
অন্যায় করব না।’’
পশুপ্রেমী সম্রাট মণ্ডলের কথায়, ‘‘বন্যপ্রাণীর মতোই পথপশুকে মারাও সমান অপরাধ। মানুষের অসহিষ্ণুতার মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। আশা করব, পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।’’
উলুবেড়িয়া থানার এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েই ওই ব্যক্তিকে আপাতত আটক করা হয়েছে। আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। ওই তরুণীর নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখা হচ্ছে।’’