নিকাশির সমস্যায় আরামবাগ হাসপাতাল চত্বর এ ভাবেই ডুবে থাকে।
পীযূষ নন্দী
আরামবাগ
বাম আমলে গড়ে ওঠা শহরের রবীন্দ্রভবনটির এখন ভগ্নদশা। সেখানে সংস্কৃতি-চর্চার রূপ বদলে এখন শুধুই চটুল গান-নাচ আর রাজনৈতিক সভা-সমিতি হয় বলে আক্ষেপ বহু সংস্কৃতিপ্রেমীর।
শহর জুড়ে যথেচ্ছ জলাশয় ভরাট এবং অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ প্রচুর। আর যানজট এবং মশার উপদ্রব থেকে এ যাত্রাতেও রেহাই মিলল না শহরবাসীর।
আরামবাগে পুরসভোট আসছে। শহরের বহু মানুষই মনে করছেন, উন্নয়নের যে সুর বেঁধে দিয়ে গিয়েছিল বামফ্রন্ট পরিচালিত শেষ পুরবোর্ড, তা থেকে অনেকটাই বিচ্যুতি ঘটেছে বিদায়ী পুরবোর্ডের আমলে।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা চিন্ময় ঘোষের কথাই ধরা যাক। তাঁর খেদ, ‘‘উন্নয়ন সে ভাবে হল কই? যা ছিল, তা-ও তো ধ্বংসের মুখে। রবীন্দ্রভবনের হাল দেখে কষ্ট হয়। শহরের কোনও পার্কে দু’দণ্ড সময় কাটানোর উপায় নেই। সেখানে অসামাজিক কাজকর্ম বাড়ছে।’’
২০১৩-র মাঝামাঝি পর্যন্ত এই পুরসভা ছিল বামফ্রন্টের। কিন্তু সেই সময়ে কিছু বাম কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। ফলে, পুরবোর্ড চলে যায় রাজ্যের শাসক দলের হাতে। তৃণমূলের কাছে বিরাট পরীক্ষা ছিল নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো এবং শহরের সৌন্দর্যায়নের। কিন্তু সেই সংক্রান্ত নানা উদ্যোগের ঘোষণা তখন কিছু হয়নি। ২০১৫ সালে পুর নির্বাচনে আরামবাগ পুরসভার ১৯টি ওয়ার্ডের ১৬টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতায় প্রতিশ্রুতির বালাই ছিল না তৃণমূলের। তবে নিকাশির উন্নয়ন, আবর্জনা-দূষণমুক্ত শহর, মশার উপদ্রব থেকে নিষ্কৃতি, সুলভ শৌচাগার এবং রাস্তার উন্নয়নের দাবি ছিল বহু মানুষের। তার মধ্যে কিছু রাস্তা এবং সুলভ শৌচাগার নির্মাণ ছাড়া বিশেষ কিছু হয়নি।
শহর জুড়ে দেখা যায়, বর্জ্যে ছয়লাপ। আবর্জনার স্তূপ। এমনকি পল্লিশ্রী সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদের গর্ভে আবর্জনা ফেলে এলাকা দূষিত করার অভিযোগ রয়েছে পুরসভার বিরুদ্ধেই। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নিকাশি ব্যবস্থার সুরাহা তো দূর, অপরিকল্পিত ভাবে সেই কাজ করতে গিয়ে শহর আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কোথাও জল জমলে সেখান থেকে নালা কেটে অন্য একটি জায়গায় ফেলে দেওয়া হচ্ছে। স্থায়ী সুরাহা কিছু হয়নি।
বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে স্পোর্টস কমপ্লেক্স, সুইমিং পুল এবং বোট ক্লাব। মাঠ আছে, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ নেই বলে অভিযোগ ক্রীড়াপ্রেমীদের।
তবে, বিগত পুরবোর্ডের আমলে কিছুই হয়নি, এমন নয়। ২০১৭ সালের মে মাসের শেষে আরামবাগ পুরসভা ‘গ্রিন সিটি’ প্রকল্পের আওতায় এলেও বরাদ্দের মোট ১৫ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকার মধ্যে কিছু সোলার প্যানেল, পথবাতি বসেছে।