জিরাট কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ে উদ্বোধন হল ভাষা শহিদ স্মারক। নিজস্ব চিত্র।
কাজের সূত্রে তো কত ভাষাই বলতে হয়। কিন্তু মাতৃভাষার প্রতি টান একেবারের শিকড়ের। সোমবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে হুগলির বিভিন্ন এলাকায় গানে-কবিতায় বারবার উঠে এল সেই কথাই।
জিরাট কলোনি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বাংলা ভাষা স্মারকের উদ্বোধন করলেন ত্রিপুরার মহারাজা বীরবিক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম বসু এবং ভাস্কর তুষারকান্তি দাস। অনুষ্ঠানে ভাষা দিবসের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন গৌতম বসু, সাংবাদিক চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্য। সঙ্গীত পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী চন্দন ভট্টাচার্য। কবিতা শোনান মাধুরী বসু সাহা। বক্তব্য পেশ করেন ভদ্রেশ্বর ইএসআই হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট শিশির সাহা। বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা কলেজ শিক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে আসা বহু মানুষ এখানে বসতি গড়ে তোলেন। তাঁদের হাতেই ১৯৫৪ সালে এই বিদ্যালয় তৈরি। ভাষা স্মারকটি যেন তাঁদের যন্ত্রণাকেই সামনে এনে দাঁড় করায়, যখন নতুন করে উদ্বাস্তু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে দেশে। স্মারকটি সেই সময়ের ইতিহাস এবং বাংলা ভাষার জন্য লড়াইয়ের কথা স্মরণ করাবে নতুন প্রজন্মকে।’’ প্রধান শিক্ষক আবদুল শরিফ শেখ-সহ বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষিকারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
‘বিদ্যাসাগর মেমোরিয়াল ফ্রি কোচিং সেন্টার’ ও ‘গাংচিল’-এর (সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী) যৌথ উদ্যোগে ভাষা শহিদ দিবস পালিত হল বৈঁচী চৌমাথায়। শহিদ বেদিতে মাল্যদান এবং প্রভাতি অনুষ্ঠান হয়। উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা রমলা মুখোপাধ্যায়। উদ্যোক্তারা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে মাতৃভাষার তাৎপর্য এবং এই দিনটির বিশেষত্ব বক্তব্যের মাধ্যমে তুলে ধরেন তিনি। স্কুল, কলেজ-সহ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে হিন্দি ভাষা ও সংস্কৃতি ‘চাপিয়ে দেওয়া’র বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে।
বিশেষ দিনে ভাষা শহিদদের স্মরণ করল শ্রীরামপুরের সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংস্থা ‘আ মরি বাংলাভাষা’। সোমবার গঙ্গার ধারে গান, গল্প, আবৃত্তি, আলোচনা, কবিতায়, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটিকে পালন করা হয়। সংস্থার সম্পাদক সমীর সাহা বলেন, ‘‘ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহিদ সফিউর রহমানের পৈতৃক বাড়ি কোন্নগরে। তাঁর স্মৃতিতে একটি রাস্তার নাম ভাষা শহিদ সরণি রাখা হোক।’’ শ্রীরামপুরের অঙ্কুর সাংস্কৃতিক সংস্থার তরফে ছোটদের নিয়ে বিশেষ দিনটি পালন করা হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
বৈদ্যবাটীর বনমালী মুখার্জি ইনস্টিটিউশনে সোমবার শহিদ স্মরণে অনুষ্ঠান হল। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। শিক্ষক তাপস দাস দিনটির গুরুত্ব আলোচনা করেন। কবিতা, আবৃত্তি ও মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের গান গাওয়া হয়। স্মার্ট ক্লাসরুমে প্রজেক্টরের সাহায্যে পড়ুয়াদের দেখানো হয় বিশেষ দিনটির গুরুত্ব বিষয়ক তথ্যচিত্র।