ফাইল চিত্র।
সাঁতরাগাছি ঝিলের পাড়ে থাকা দখলদারদের উচ্ছেদে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা হলফনামা দিয়ে জানানোর জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। গত শুক্রবার এই মামলার শুনানি ছিল। সোমবার মামলার লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাতে আদালত জানিয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে বিষয়টি নিয়ে টালবাহানা চলছে। তাই পরবর্তী শুনানির দিন, অর্থাৎ আগামী ২৭ অগস্টের মধ্যে এই হলফনামা জমা দিতে হবে। একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে হাওড়ার জেলাশাসককেও।
সাঁতরাগাছি ঝিল দূষণমুক্ত করতে নিকাশি পরিশোধন প্লান্ট (সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা এসটিপি) তৈরি, ঝিলপাড়ের দখলদারদের সরানো-সহ একাধিক দাবিতে ২০১৬ সালে পরিবেশ আদালতে মামলা রুজু হয়েছিল। কিন্তু পরিবেশকর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, ঝিলের দূষণের মাত্রা তো কমেইনি। উল্টে এসটিপি তৈরি, দখলদার সরানোর গাফিলতি নিয়ে রাজ্য সরকার এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মধ্যে দাবি-পাল্টা দাবি শুরু হয়েছে।
যেমন দখলদার উচ্ছেদ প্রসঙ্গে এর আগে রেলের তরফে অতিরিক্ত হলফনামা দাখিল করা হয়েছিল পরিবেশ আদালতে। সেখানে রেল জানিয়েছিল, ২০১৭ সালের নভেম্বরে আদালতের নির্দেশ মেনে ঝিলপাড়ের বেআইনি দখলদারদের ‘হিয়ারিং’-এর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তার পরে প্রত্যেক দখলদারকে আলাদা আলাদা ভাবে উচ্ছেদের নোটিস দেওয়া হয়। সেই উচ্ছেদ-পর্ব সম্পন্ন করার জন্য হাওড়ার জেলাশাসকের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। যে প্রসঙ্গে রেলকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, তার পরেও এই বিষয়ে কোনও অগ্রগতি হয়নি।
অবশ্য এই প্রথম নয়। গত এপ্রিলেও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের তরফে আদালতকে জানানো হয়েছিল, উচ্ছেদ পর্বে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে পুলিশি সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল একাধিক বার। কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফে কোনও সাহায্য না মেলায় দখলদার উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। যার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মামলার আবেদনকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে মনে হয় না আদৌ দখলদার উচ্ছেদ করা হবে। না হলে এই মামলা তো ২০১৬ সাল থেকে চলছে। পরিবেশ আদালতও একাধিক বার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু রাজ্য-রেলের টানাপড়েনে সেই নির্দেশ বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এটা চূড়ান্ত হতাশাজনক।’’ আর এক পরিবেশবিজ্ঞানীর বক্তব্য, ‘‘ঝিলের দূষণ কমাতে দখলদার উচ্ছেদ, নিকাশি পরিশোধন প্লান্ট তৈরি আবশ্যিক। কিন্তু তা আর বাস্তবায়িত হচ্ছে না!’’
নিকাশি পরিশোধন প্লান্ট তৈরি খরচ এবং সময়সাপেক্ষ হওয়ায় আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, ঝিলের দূষণ নিয়ন্ত্রণে সেটির চারপাশে নর্দমার মালা (গারল্যান্ড অব সুয়ারেজ) তৈরি করতে হবে। যে নর্দমার জল গিয়ে পড়বে মূল ঝিলের পাশে একটি ছোট জলাশয়ে। সেটি ‘অক্সিডেশন পন্ড’ হিসেবে কাজ করবে এবং তরল বর্জ্য পুরোপুরি পরিশোধনের পরে নাজিরগঞ্জ খালে ফেলা হবে। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে হাওড়া পুরসভার তরফে আদালতে আবেদন করা হয়, প্রস্তাবিত নর্দমার মালা তৈরির প্রয়োজনীয় দক্ষতা রয়েছে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (কেএমডিএ)। তাই তাদের এই মামলায় যুক্ত করা হোক। যার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, পরবর্তী শুনানির আগে কেএমডিএ-কেও হলফনামা জমা দিতে হবে।