ফাইল চিত্র।
দেশজুড়ে ফের করোনার চোখরাঙানিতে বিভিন্ন রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফের গৃহমুখী হচ্ছেন। তাঁদের সুরক্ষার জন্য নির্দিষ্ট আইন (ইন্টার-স্টেট মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কমেন অ্যাক্ট, ১৯৭৯) আছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা মানা হয় না, এ অভিযোগও রয়েছে। এ বার তা কার্যকর করতে বিভিন্ন রাজ্যের শ্রম দফতরে আবেদন করল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের তরফে দিন কয়েক আগে এই মর্মে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিতে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, হুগলির চন্দননগরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আইন সহায়তা কেন্দ্রের’ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এই আর্জি।
গত বছর, করোনার প্রথম পর্বে লকডাউন ঘোষণার সময়েই দেশের নানা রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থা সামনে এসেছিল। অভুক্ত শ্রমিকের হাহাকার, ভিন্ রাজ্য থেকে মাইলের পর মাইল হেঁটে তাঁদের বাড়ি ফেরার দৃশ্য এখনও দেশবাসীর মনে টাটকা। করোনার প্রকোপ কমার পরে এবং নিজের রাজ্যে কাজ না-পেয়ে হাজার হাজার শ্রমিক আবারও গত বছরের শেষ দিক থেকে রুজির খোঁজে পাড়ি জমান পুরনো ঠিকানায়। কিন্তু ফের বিধি বাম।
বিভিন্ন সামাজিক এবং মানবাধিকার সংগঠনের অভিযোগ, পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরক্ষায় হেলদোল নেই রাষ্ট্রের। আইন সহায়তা কেন্দ্রের সদস্যদের বক্তব্য, এ বার ওই আইন কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট দফতর আক্ষরিক অর্থে উদ্যোগী হয় কিনা, তার উপরে বহু পরিযায়ী শ্রমিকের ভাল-মন্দ নির্ভর করছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের গোড়াতেও কেন্দ্রের তরফে ওই মর্মে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল। তার আগে পশ্চিমবঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিকদের অধিকার সুনিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় শ্রম দফতরের তরফে এই রাজ্যের শ্রম দফতরকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি বলে অভিযোগ।
আইন সহায়তা কেন্দ্রের সদস্যদের দাবি, বিভিন্ন ইটভাটায় সমীক্ষা চালিয়ে শ্রমিকদের দুরবস্থার ছবি উঠে এসেছে। বহু পরিযায়ী শ্রমিক সেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সপরিবার থাকেন। অনেক ভাটায় শৌচাগারই নেই। মহিলারা পর্যন্ত খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করতে বাধ্য হন। নেই চিকিৎসার উপযুক্ত ব্যবস্থা। তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার উপযুক্ত জায়গাও নেই। পাথর খাদান, নির্মাণ শিল্প-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের কাজে পরিযায়ী শ্রমিকদের একই পরিস্থিতি বলে অভিযোগ।
আইন সহায়তা কেন্দ্রের কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে বিষয়টি রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সামনে তুলে ধরেছি। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। লকডাউনের সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিযায়ী শ্রমিক সংক্রান্ত আইন যথাযথ ভাবে কার্যকর করতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। না হলে তা হবে আইন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।’’
বিশ্বজিৎবাবুর আক্ষেপ, কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগ কাগজপত্রেই থেমে থাকছে। লকডাউনের সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা সামনে আসার পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফে তাঁদের নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, তারাও কথা রাখেনি।
চন্দননগরের সংগঠনটির দাবি, নিয়ম অনুযায়ী পরিয়ায়ী শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি-সহ ইএসআই, প্রভিডেন্ট ফান্ডের মতো অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। ইএসআই না-থাকলে উপযুক্ত চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে হবে। শ্রমিকদের ছেলেমেয়ের জন্য পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট শ্রমিক যে প্রদেশের বাসিন্দা এবং যে রাজ্যে কর্মরত— দু’জায়গাতেই তাঁদের নাম নথিভুক্ত করতে হবে। শ্রম দফতরের অনুমতি নিয়ে তাঁদের কাজে নিতে হবে। শ্রমিকপিছু নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা শ্রম দফতরে জমা রাখতে হবে, যাতে মজুরি না-পেলে ওই দফতর তা মেটাতে পারে।